একটি সুন্দর ও নিষ্পাপ জীবনের দূঃখজনক সমাপ্তি!


একটি সুন্দর ও নিষ্পাপ জীবনের দুঃখজনক সমাপ্তি!

 

 

 

আমার প্রিয় পিতা মোঃ মনসুর রহমান ছিলেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত সিনিয়র সহকারী শিক্ষক। তিন গত ২০০৪ সালে পেশা জীবন থেকে অবসরে চলে যান। তার অবসর জনিত কারণে সরকারের তরফে এককালীন পেনশন, গ্রাচিউটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ প্রায় ৫ লক্ষ থেকে আনুমানিক ৬ লক্ষ টাকা পান। তাছাড়া ২০০৪ কিংবা ২০০৫ সালের দিকে আমাদের গ্রামীণ অঞ্চলে নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবারের জন্য এই পরিমাণ অর্থ কিন্তু মোটেও কোন কম ছিল না। আর সেই সময় থেকেই তিনি নিয়মিত সরকারের নির্ধারিত ভাতা পেতেন।

 

 

 

 

তবে হতাশাজনক হলেও সত্য যে, তিনি তার জীবনের শেষ সম্বল হিসেবে প্রাপ্ত অর্থটুকু সুচিন্তিতভাবে রক্ষা করতে পারেননি কিংবা নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারেনি। তিনি ভালো মনে করে নিজ পরিবারের কিছু সদস্যদের স্বাবলম্বী বা সফল করে গড়ে তোলার জন্য শতভাগ অর্থ নিজে এবং তাদের সাথে নিয়ে ধান চাষের প্রজেক্ট শুরু করেন।

 

 

 

 

গ্রামে বসবাস করলেও তার এই কাজে পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই প্রতি বছর ক্ষতি হলেও লাভের আশায় ব্যাংক থেকে গচ্ছিত অর্থ তুলে বার বার বিনিয়োগ করতে থাকেন। তিনি আশা করেছিলেন এখান থেকে বড় ধরনের মুনাফা হলে তা দিয়ে কয়েক বছর পর হজব্রত পালন করবেন এবং নিজের বাড়িটি ঠিক করবেন।

 

 

 

অথচ তার এই সুচিন্তা ও আশা অল্প কয়েক বছরের মধ্যে চরমভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যায়। নিজ পরিবারের কিছু সদস্যের সীমাহীন প্রতারণার জন্য মাত্র ৪ বছরের মাথায় তার শেষ সম্বলটুকু শতভাগ নিঃশেষ হয়ে যায়। তার পাশাপাশি তিনি একাধিক ব্যক্তি এবং দোকানে অতিরিক্ত দেনা ও ঋণ পরিশোধের জন্য এক রকম বাধ্য হয়ে নিজের কিছু জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। তবুও শেষ পর্যন্ত তিনি সকলকে সাথে নিয়ে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন।

 

 

 

তবে যা হওয়ার তা আগেই শেষ হয়ে গেছে। তারপর তিনি আর কোন দিনই ঋণ ও আর্থিক সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। শেষমেষ চরম আর্থিক সংকট, দেনা এবং হতাশায় তিনি ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে মারা যান। অথচ তিনি কিনা প্রায় চল্লিশ বছর যাবত সুনামের সাথে শিক্ষকতা করে গেছেন এবং শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি চরম অনুরাগী।

 

 

তিনি সারা জীবনে প্রায় শতাধিকের উপর কবিতা গল্প লিখেছেন এবং খুবই সহজ সরল কিংবা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করে গেছেন। তার লেখা অপ্রকাশিত সাহিত্য কর্মের অনেকগুলো এখনো পর্যন্ত আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এক অসুস্থ হওয়া ব্যতীত তিনি কোনো দিনই এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেননি এবং সর্বদা পবিত্র কোরআনের জ্ঞান অর্জনের নিমগ্ন থাকতেন। যা আমাকে খুবই মুগ্ধ করত। যদিও অবশ্য আমি নিজেও সেভাবে কখনোই ধর্মীয় অনুশাসন পালন করতে পারিনি।

 

 

 

 

এই হলো আমাদের সমাজ জীবনের চলার পথের এক বাস্তব ও নিষ্ঠুর চিত্র। আমি আমার জীবনের প্রথম ২২-২৪ বছর ঢাকার মিরপুরে এবং বগুড়ায় বসবাস করলেও এই চিত্রটি বর্তমানে শহরে কোন পর্যায়ে রয়েছে তা আমি ঠিক জানি না। তবে গ্রামীণ পর্যায়ে নিজেদের স্বজন ও সন্তানের দ্বারা ছলচাতুরী করে অর্থ আত্মসাৎ এবং অবৈধভাবে জমা-জমির দখল কিংবা লিখে নেওয়ার মতো ভয়ংকর পরিস্থিতি আমাকে খুবই ব্যথিত করে।

 

 

 

 

আর ঠিক তাই সমাজে সুন্দরভাবে বেচে থাকতে হলে নিজের শেষ গচ্ছিত সম্বল কারো হাতে কোন অবস্থাতেই তুলে দেয়া যাবে না। সে যতই নিজের সন্তান কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী হোক না কেন। কারণ সমাজে চলার পথে আর্থিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম না হলে সকলেই কিন্তু আপনাকে আমাকে অনেকটাই গুরুত্বহীন মনে করবে এবং শুধু নিজ প্রয়োজনেই ব্যবহার করবে কিংবা খুব একটা প্রয়োজন না হলে এড়িয়ে যেতে চাইবে। আর বিপদে বা সমস্যায় পড়লে দুই একজন ব্যতীত কেউ কিন্তু পাশে এসে দাঁড়াবে না। আর এটাই হচ্ছে বর্তমানে আমাদের সমাজের বাস্তব অবস্থা।

 

 

ধন্যবাদ

 

 


Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?

এবার আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে তুরস্কঃ