মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্লাকহোল হচ্ছে টিওএন-৬১৮ আল্ট্রা সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল!
মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং এবং অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক একটি অবজেক্ট হচ্ছে ব্লাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। আর সব থেকে ছোট আকারের একটি ব্লাকহোলের ভর হতে পারে কিনা আমাদের সোলার সিস্টেমের একমাত্র নক্ষত্র সূর্য অপেক্ষা প্রায় ৩.৮ গুণ বেশি। তবে বিজ্ঞানীরা এবার মহাবিশ্বে বিশাল আকার ও ভরের আল্ট্রা সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোলের সন্ধান পেয়েছেন। তারা এর নাম দিয়েছেন টিওএন-৬১৮। যদিও এই সুবিশাল মহাবিশ্বে এর অপেক্ষা হয়ত আরো শক্তিশালী কিংবা ধ্বংসাত্মক ব্লাকহোল থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা হাবল টেলিস্কোপের ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এই ব্লাকহোলটি আমাদের পৃথিবী থেকে ১৮.২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ক্যানেস ভেনাটিসি এবং কোমা বেরেনিসেস নক্ষত্রপুঞ্জের সীমানার কাছে অবস্থিত। এর আনুমানিক ভর সূর্য অপেক্ষা ৪০.৭ বিলিয়ন গুণ বেশি। যদিও অবশ্য এর আকার বা ব্যাস আমাদের সূর্য অপেক্ষা আনুমানিক ৩০-৪০ গুণ বেশি হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা এটি খুব সম্ভবত একাধিক বিশাল আকারের ব্লাকহোল একত্রে মিলিত হয়ে এক আল্ট্রা সুপার জায়ান্ট ব্লাকহোলে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এটি প্রতিনিয়ত অবিশ্বাস্যভাবে বিপুল পরিমাণ মহাজাগতিক অবজেক্ট গিলে ফেলছে। আর এর ফলে সৃষ্ট অতি উজ্জ্বল আলোর বলয়ের কারণে বিজ্ঞানীরা এটির অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা টিওএন-৬১৮ আল্ট্রা সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, এর কোয়াসার থেকে বিকিরণের মাত্রা এতটাই তীব্র যে, এর ফলে এটিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে এক অতি উজ্জ্বল আলোর বলয় বা কোয়াসার। যার উজ্জ্বলতা কিনা আমাদের সূর্যের উজ্জ্বলতা অপেক্ষা প্রায় ১৪০ ট্রিলিয়ন গুণ বেশি হতে পারে। আবার এটিকে ঘিরে থাকা ধুলো ও গ্যাসের একটি সুবিশাল মেঘ কিনা প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। যা হচ্ছে কিনা আমাদের চিরচেনা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের প্রায় দ্বিগুণের বেশি বড় আকার।
আসলে মহাবিশ্বের ছুটে বেড়ানো ব্ল্যাকহোলের আচরণ এতটাই রহস্যময় ও ধ্বংসাত্মক হয় যে, এটি প্রতিনিয়ত তার আশেপাশের শত শত নক্ষত্র এবং অন্যান্য অবজেক্ট গিলে ফেলছে এবং এর ভেতর থেকে আলো পর্যন্ত নিঃসৃত হয় না। আর ঠিক এই কারণেই ছায়াপথে থাকা ব্লাকহোলের অস্তিত্ব শক্তিশালী টেলিস্কোপে খুঁজে পাওয়াটা খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ হয়ে থাকে বিজ্ঞানীদের কাছে। যদিও ব্লাকহোলের কোয়াসারের অতি উজ্জ্বল আলোর বলয়ের কারণে এর অস্তিত্ব শনাক্ত করার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের সেন্টারের কাছাকাছি অসংখ্য স্টার সিস্টেমের কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করে অনুমান করেন যে, এই ছায়াপথের সেন্টারে একটি শক্তিশালী সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল অবস্থান করছে। তাঁরা এর নাম দেন স্যাজেটেরিয়াস-এ সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল। যার ভর কিনা অবিশ্বাস্যভাবে সূর্য অপেক্ষা আনুমানিক ৪২ লক্ষ ৯৭ হাজার গুণ বেশি হতে পারে। যদিও এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিশাল আকার ও ভরের আল্ট্রা সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল নয়।
তবে বিজ্ঞানীদের খুঁজে পাওয়া এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট ব্লাকহোলটি হচ্ছে 'ইউনিকর্ন'। যা পৃথিবী থেকে প্রায় দেড় হাজার আলোকবর্ষ দূরে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের মনোসেরোস তারামণ্ডলের ব্ল্যাকহোলটির অবস্থান করছে। এর ভর কিনা সূর্য অপেক্ষা প্রায় তিনগুণ বেশি হতে পারে। গত ২০২১ সালে আমেরিকার ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী শক্তিশালী ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এটিকে আবিষ্কার করেন।
আল্ট্রা সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোলকে আসলে কোয়াসার এ অত্যধিক পরিমাণে এনার্জি দেওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। বিজ্ঞানীরা কোয়াসার-কে মহাবিশ্বের সব থেকে অতি মাত্রায় আলোকিত অবজেক্টের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করেন। মূলত একাধিক সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল একসাথে একত্রিত হওয়ার পর তা নতুন করে এক ধরনের বিশাল আকার ধারণ করে। যা পরবর্তী সময়ে আল্ট্রা সুপারম্যাসিভ বা জায়ান্ট ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি করে সক্রিয়ভাবে তার আশেপাশে থাকা সকল অবজেক্টকে নিজের শক্তিশালী মধ্যাকর্ষণের মাধ্যমে ভিতরে টেনে নেয় কিংবা গ্রাস করে ফেলে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিশ্বের এক অদৃশ্য অবজেক্ট হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্লাকহোল। আর এটিকে কিন্তু শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনাক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। যখন ব্লাকহোল তার নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আশেপাশের অবজেক্ট গিলে ফেলে, ঠিক তখন বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে।
এই শক্তি বিপরীতমুখী ধাক্কায় কৃষ্ণগহ্বরকে ঘিরে অনেকটাই দূরত্বে তীব্র মাত্রায় অত্যুজ্জ্বল আলোর বলয় তৈরি করে। আর এই আলোর বলয়কেই কোয়েসার নাআম দিয়েছেন তাঁরা বলা হয়। বিগত ষাট বছরের শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের আনুমানিক ২ লক্ষ কোয়াসারের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে পেরেছেন।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি স্কাই এট নাইট ম্যাগাজিন, ইউকীপিডিয়া, নাসা, সায়েন্স।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman) সহকারী শিক্ষক ও লেখক, বিনগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।
Comments
Post a Comment