মহান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই এর কঠোর সাধনা ও আবিষ্কার!






সপ্তদশ শতাব্দীতে ১৬০৮ সালে নেদারল্যান্ডসের এক চশমা নির্মাতা ‘লিপেরশাইম’ নামক ওলন্দাজ নাগরিক প্রথম কোন হস্তনির্মিত টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তার আবিষ্কৃত এই টেলিস্কোপের কার্য ক্ষমতা ছিল একেবারেই সীমিত পর্যায়ের। এটি দ্বারা পৃথিবী থেকে দূরবর্তী গ্রহ উপগ্রহ অনেকটাই ক্ষুদ্র আকারের ও অস্পষ্ট হলেও কিন্তু পর্যবেক্ষণ করার উপযোগী ছিল। আর এই টেলিস্কোপের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও লিপেরশাইম এর প্রথম আবিষ্কৃত টেলিস্কোপটি কিন্তু মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা করে।



আর সমকালীন যুগে নতুন এই টেলিস্কোপ আবিষ্কারের খবর যখন পৃথিবীর বিখ্যাত ইতালীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলেই জানতে পারেন, তখন তিনি এই জাতীয় আরো শক্তিশালী টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরির চিন্তা করেন। আর ঠিক ১০ মাসের কঠোর সাধনা ও চেষ্টার পর ১৬০৯ সালে গ্যালিলিও বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রয়োগ করে নিজেই তৈরি করেন এক শক্তিশালী টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র।



তিনি তার নতুন আবিষ্কৃত টেলিস্কোপকে জ্যোতির্বিদ্যায় বা মহাকাশ গবেষণায় অত্যন্ত সফল ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করেন। তার উদ্ভাবিত এই টেলিস্কোপটি লিপেরশাইম এর তৈরি টেলিস্কোপ অপেক্ষা ছিল প্রায় ২০ থেকে ৩০ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং সমকালীন যুগের এক উচ্চ প্রযুক্তির আবিষ্কার। তাছাড়া তিনি ১৬২৪ সালে খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর প্রথম কোন কার্যকর মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তাছাড়া বিংশ শতাব্দীর আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা ‘গ্যালিলিও গ্যালিলেই’কে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।



তিনি নতুন আবিষ্কৃত এই টেলিস্কোপ দ্বারা নিবিড়ভাবে আমাদের সোলার সিস্টেমের গ্রহ উপগ্রহ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি খালি চোখেই তার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথে ছড়িয়ে থাকা ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। তাছাড়া তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কিছু অংশ পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার সাথে কিছু বিষমতারা ও কয়েকটি নীহারিকা অবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার দ্বারা নতুন এক অজানা ও রহস্যময় জগৎ বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচন করেন তিনি।



তিনি শনি গ্রহের রিং বলয়, চাঁদের কলঙ্ক এবং জুপিটার গ্রহের চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন তার তার তৈরি টেলিস্কোপ নিয়ে। আগে প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিদরা মনে করতেন যে, আমাদের মহাবিশ্বের সকল গ্রহ উপগ্রহ এবং নক্ষত্র শুধু আমাদের পৃথিবীতে কেন্দ্র করেই ঘুরছে বা প্রদক্ষিণ করছে। আর তিনি বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, তাদের প্রচলিত এই মতবাদ কিন্তু সত্য নয়। আসলে প্রাচীন অ্যারিস্টটলীয় ত্রুটিপূর্ণ ধারণার অবসানে গ্যালিলিও গ্যালিলেই এর মহাকাশ বিষয়ক নিবিড় গবেষণা এবং নিজস্ব আবিষ্কারগুলোই মূলত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।



তবে হতাশাজনক হলেও সত্য যে, তার প্রমাণিত আবিষ্কার ও মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা কিংবা মতবাদ প্রচারের কারণে তৎকালীন সমাজের ধর্মীয় খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চ ও তার ধর্মগুরু দ্বারা তাঁকে চরমভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল। বিশেষ করে ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাঁকে নিষিদ্ধ করে এক আদেশ জারি করে যে, তিনি আর শিক্ষকতা এবং মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন না।



বিশেষ করে পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে তার এই মতবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় রোমান ক্যাথলিক চার্চ সম্প্রদায়। জীবনের শেষ সময়ে অত্যন্ত হতাশায় ভারাক্রান্ত এই ইতালীয় মহান বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক ও মহাকাশ গবেষক গ্যালেলিও ৮ই জানুয়ারি ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তৎকালীন সমাজের প্রভাবশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও তাদের সৃষ্ট হোলি অফিস জোকের মতো তার পেছনে লেগে ছিল।



তথ্যসূত্রঃ সায়েন্স/ ইউকীপিডিয়া/ব্রিকানিকা/নাসা/নিউ সায়েন্সটিস্ট



সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com



Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

ভারত ও চীনের সীমান্ত উত্তেজনা...

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?