অদূর ভবিষ্যতে মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস স্টেশন স্থাপন করতে যাচ্ছে রাশিয়া!

 


গত ২রা জুলাই মঙ্গলবার রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’ জানিয়েছে যে, রাশিয়া আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশে আবারো নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস স্টেশন স্থাপন করবে। যার আওতায় রাশিয়া প্রাথমিকভাবে আগামী ২০২৩০ সালের মধ্যেই উচ্চ প্রযুক্তির স্পেস স্টেশনের ৪টি মডিউল কোর তৈরি করে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর লো আর্থ অরবিটে প্রেরণ করবে। যা নিয়ে দেশটি ইতোমধ্যেই একটি দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে।

 

 

 

 

রাশিয়া আসলে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। যার ফলে রাশিয়া গত ২০২২ সালেই ঘোষণা দিয়েছিল যে, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) এর সার্ভিস লাইফ টাইম শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই চলতি ২০২৪ সালে এ প্রজেক্ট থেকে বেড়িয়ে যাবে তারা। যদিও অবশ্য পরবর্তী সময়ে আগামী ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই প্রজেক্টে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাশিয়া। আর ভবিষ্যতে রাশিয়া পরিকল্পনা মাফিক চীনের মতো নিজেদের নতুন প্রজন্মের স্পেস স্টেশন মহাকাশে পর্যায়ক্রমে মহাকাশে স্থাপন করবে।

 

 

 

 

বর্তমানে আমেরিকা ও রাশিয়াসহ পৃথিবীর মোট ৩২টি দেশ একত্রে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। এটিকে প্রথম ১৯৯৮ সালের ২০শে নভেম্বর মহাকাশে স্থাপনের কাজ শুরু হয়। তবে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এই স্পেস স্টেশনের সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয়েছে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত। আর তারপর খুব সম্ভবত এটিকে পরিকল্পনা মাফিক প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে নিমো পয়েন্টে ধ্বংস করে ফেলা হবে।

 

 

 

 

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘রসকসমস’ এর প্রধান ইউরি বরিসভ জানিয়েছেন যে, তারা ইতোমধ্যেই নিজ দেশের ১৯টি প্রথম সারির মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উৎপাদনকারী কোম্পানির প্রধানের সাথে প্রাথমিকভাবে স্পেস স্টেশনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মডিউল কোর ডিজাইন ও তৈরির চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। তবে রাশিয়ার এই নতুন প্রজন্মের স্পেস স্টেশন তৈরির প্রজেক্টে মোট ব্যয় হতে পারে আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

 

 

 

 

রাশিয়ার ‘রসকসমস’ নিশ্চিত করেছে যে, গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রথমে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ও শক্তি উৎপাদনের মডিউলটি আগামী ২০২৭ সালেই মহাকাশে স্থাপন করা হবে। তাছাড়া অন্যান্য তিনটি মডিউলগুলো আগামী ২০৩০, ২০৩১ এবং ২০৩৩ সালে মধ্যেই পরিকল্পনা মাফিক পৃথিবীর লো আর্থ অরবিটে স্থাপন করে এই উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায় রাশিয়া।

 

 

 

 

রাশিয়ার ‘রসকসমস’ আরো জানিয়েছে যে, নতুন প্রজন্মের স্পেস স্টেশন মডিউলের ডিজাইন শেষ করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তৈরি করতে চায়। তাছাড়া উন্নত প্রযুক্তির অত্যাধুনিক মহাকাশযান, স্পেস ডেলিভারি হেভি রকেট নির্ধারিত সময়ের আগেই তৈরির বিষয়ে রাশিয়ার অন্যান্য ১৯টি স্পেস টেকনোলজি কন্ট্রাক্টরের সাথে চুক্তি হয়েছে। অবশ্য এই মহাপরিকল্পনার আওতায় ল্যান্ড বেসড কন্ট্রোল এন্ড অপারেটিং স্টেশন, প্রশিক্ষণ এবং ফ্লাইট টেস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

 

 

 

আসলে কোল্ড ওয়ার যুগের শেষের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন একক ভাবে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি হেভি ‘মীর’ স্পেস স্টেশন পৃথিবীর লো আর্থ অরবিটে স্থাপন করে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। মূলত প্রায় ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৭০০ কেজি ওজনের এই ‘মীর’ স্পেস স্টেশনটি ১৯৮৬ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারিতে মহাকাশে স্থাপন করে এই নতুন ইতিহাস রচনা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন (ইউএসএসআর)।

 

 

 

 

যদিও অবশ্য ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও ‘মীর’ মহাকাশ স্টেশনের আপগ্রেডিং ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কাজ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলমান থাকে। এটি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫৮ কিলোমিটার উচ্চতায় লো আর্থ অরবিটে স্থাপন করা হয়েছিল এবং এর সর্বোচ্চ অরবিটিং গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৭,৭০০ কিলোমিটার। ২০০১ সাল পর্যন্ত রাশিয়া এটিকে সক্রিয় রাখতে ও পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়নের জন্য মোট ৪.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল।

 

 

 

 

তবে চরম আর্থিক সংকটের কারণে রাশিয়া ২০০১ সালের ২৩শে মার্চ প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে (স্যাটেলাইট গ্রেভ ইয়ার্ডে) নিমো পয়েন্টে ‘মীর’ স্পেস স্টেশনটিকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয় রাশিয়া। তবে এটা ঠিক যে, ‘মীর’ মহাকাশ স্টেশনটি মানব জাতির পাঠানো প্রথম কোন স্পেস স্টেশন ছিল না। মানব জাতির ইতিহাসে মহাকাশে পাঠানো প্রথম কোন স্পেস স্টেশনটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো ১৮ হাজার ৪২৫ কেজি ওজনের ছোট্ট এক স্যালিয়্যুত-১ স্পেস মডিউল কোর।

 

 

 

 

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আসলে ১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিল মহাকাশে পরীক্ষামূলকভাবে স্যালুয়েত-১ স্পেস মডিউলটিকে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২২০ কিলোমিটার উচ্চতায় লো আর্থ অরবিটে স্থাপন করেছিল। যা মোট ১৭৫ দিন লো আর্থ অরবিটে অবস্থান করে এবং ১৯৭১ সালের ১১ই অক্টোবর আবার ভূপৃষ্ঠে নামিয়ে আনে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে বর্তমানে একক কোন দেশ হিসেবে রেড জায়ান্ট চীন গত ২০২১ সাল থেকে মহাকাশে তাদের নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রযুক্তির তৈরি তিয়ানগং স্পেস স্টেশন পরিচালনা করে যাচ্ছে।

 

 

 

 

তথ্যসূত্রঃ রয়েটার্স, ইউকীপিডিয়া, চায়না সায়েন্স, রসকসমস, ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং, তাস।

 

 

 

 

 

সিরাজুর রহমান, শিক্ষক ও লেখক, বিনগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com




https://www.bigganchinta.com/space/rr3wgfyoif

Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?

এবার আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে তুরস্কঃ