ইএল ক্যাপ্টেন' এক অবিশ্বাস্য দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার!
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং এক্সা-স্কেল গতির সুপার কম্পিউটার হচ্ছে 'ইএল ক্যাপ্টেন'। এটি মূলত ডিজাইন ও তৈরি করেছে আমেরিকার টেক জায়ান্ট Hewlett Packard Enterprise (এইচপিই) কোম্পানি। যা পূর্ণাঙ্গভাবে গত ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে উন্মোচন করা হয়। যদিও গত ২০২৩ সালের মে মাস থেকে পর্যায়ক্রমে এর সিস্টেম এবং ইকুইপমেন্ট ইনস্টলেশনের কাজ শুরু করা হয়।
আসলে গত ২০২২ সাল থেকে ২.০৬ এক্সা-স্কেল সক্ষমতার 'ফ্রন্টিয়ার' বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটিং সিস্টেম হিসেবে টিকে ছিল। বর্তমানে যাকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন প্রজন্মের 'ইএল ক্যাপ্টেন' সুপার কম্পিউটিং সিস্টেম। এতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লিন্যাক্স (টিওএসএস) ওএস।
এই সুপার কম্পিউটিং সিস্টেমের গতি হচ্ছে কিনা অবিশ্বাস্যভাবে ২.৭৯ কিংবা ২.৭৪৬৩ এক্সাফ্লপ বা প্রতি সেকেন্ডে (Rpeak) রেট ২,৭৪৬.৩ পেটাফ্লপ (এফএলওপিএস) বা floating point operations per second (FLOPS)। এটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১ কুইন্টিলিয়ন এর অধিক হিসাব ক্যালকুলেশনের মাইলফলক অর্জন করেছে। আর এক কুইন্টিলিয়ন সমান এক এর পর ১৮টি শূন্য (১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) বসিয়ে হিসেব করা হয়।
মেশিন লার্নিং অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি নির্ভর নতুন প্রজন্মের এই সুপার কম্পিউটারটি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লিভারমোরে অবস্থিত লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (এলএলএনএল)-তে স্থাপন করা হয়েছে। যা ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকার ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি উচ্চস্তরের জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র।
৭,৫০০ বর্গফুট স্পেস ফ্লোরে ৮৭টি কেবিনে স্থাপিত এই সুপার কম্পিউটারের কোরের সংখ্যা হচ্ছে ১১,০৩৯,৬১৬টি। এতে ব্যবহৃত হয়েছে এএমডি অপ্টিমাইজড ফোর্থ জেনারেশন (ইপিওয়াইসি) ২৪সি ১.৮জিএইচজেড প্রসেসর। এটিতে মোট প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কেবল ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি তৈরি করতে Hewlett Packard Enterprise (এইচপিই) মোট ব্যয় করেছে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার বা তার অধিক পরিমাণ অর্থ।
'এইচপিই ক্রে' মডেলের 'ইএল ক্যাপ্টেন' সুপার কম্পিউটারটি গত ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কার্যকরভাবে চালু করা হয়। এটি পরিচালনা করতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট (পিক আওয়ার) বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। যা হয়ত একটি ছোট আকারের শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। আর এই অভাবনীয় উচ্চ গতির উদ্ভাবন নিয়ে ইতোমধ্যেই টেক জায়ান্ট দেশগুলোর ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে।
Hewlett Packard Enterprise (এইচপিই) কোম্পানির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, ইএল ক্যাপ্টেনকে বিশ্বের অন্য যে কোন সুপার কম্পিউটার অপেক্ষা আনুমানিক ১৬ গুণ অধিক শক্তিশালী ও দ্রুত গতি সম্পন্ন সুপার কম্পিউটিং সিস্টেম হিসেবে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে। তার পাশাপাশি আনুমানিক ৭.৭ বিলিয়ন মানুষের পক্ষে একত্রে যে হিসেব করতে প্রায় ৮ বছর সময় লাগবে, তা কিনা 'ইএল ক্যাপ্টেন' মাত্র ১ সেকেন্ডের মধ্যেই সম্পন্ন করে ফেলতে পারে। যদিও অবশ্য এটি একটি মাত্র অনুমান ব্যতীত আর কিছুই নয়।
এই সুপার কম্পিউটারটিকে বর্তমানে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা মিশনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ( এলএলএনএল) দ্বারা পরিচালিত এবং এটি বিশেষ করে আমেরিকার জাতীয় পারমাণবিক নিরাপত্তা প্রশাসন (এনএনএসএ) এর জন্য উচ্চ প্রযুক্তির প্রথম এক্সা-স্কেল সুপার কম্পিউটার হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: টপ৫০০, এইচপিই, নিউ সায়েন্টিস্ট, অ্যাডভান্স শিমুলেইশন এন্ড কম্পিউটিং, উইকিপিডিয়া।
সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
Comments
Post a Comment