পৃথিবীর বুকেই কী লুকিয়ে রয়েছে এলিয়েন?

 


 

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ভিনগ্রহের এলিয়েনের অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে তুমুল তর্ক বিতর্ক চলে আসছে। এলিয়েন নিয়ে ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে হাজারের অধিক রোমাঞ্চকর সিনেমা তৈরি করা হলেও বাস্তবে আজ অব্ধি পৃথিবীতে কিংবা পৃথিবীর বাহিরে এদের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, ভিনগ্রহী এলিয়েনরা নাকি পৃথিবীতে গোপনে মানুষের ছদ্মবেশ নিয়ে আমাদের মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে।

 

 

 

 

মূলত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান ফ্লোরিশিং প্রোগ্রামের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণাপত্রে এলিয়েন লাইফ নিয়ে এমনটি দাবি করা হয়। যদিও তাদের দাবির সপক্ষে কোন বাস্তব প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। তারা দাবি করে যে, খুব সম্ভবত আমাদের পৃথিবীতে এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকতে পারে। হতে পারে তা পৃথিবীর ভূগর্ভে, চাঁদের গভীরে কিংবা ছদ্মবেশে মানুষের মাঝেই তারা লুকিয়ে রয়েছে। আর নতুন এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে, এলিয়েন সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের হাতে যথেষ্ট তত্ত্ব বা প্রমাণ রয়েছে। যা কিনা আমাদের পৃথিবীতে এলিয়েন লাইফের অস্তিত্বের বিতর্ককে আরো অধিক মাত্রায় উসকে দিয়েছে।

 

 

 

 

তাছাড়া গত ২০২৩ সালের দিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দ্য ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয় যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের বেশ কয়েকটি আকাশ যান বা সসার (ইউএফও) খুঁজে পেয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ করে মূলত আমেরিকার সিআই এর গোপন ইউনিট দ্য অফিস অব গ্লোবাল এক্সেস (ওজিএ)। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গোপন অভিযানে এলিয়েনদের আকাশ যান (ইউএফও) খুঁজে পেয়েছে ওজিএ। যার মধ্যে আবার তারা কিনা দুটি ইউএফও অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় খুঁজে পায় বলে দাবি করে।

 

 

 

 

বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞান ও গবেষণার একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিষয় হলো এলিয়েন লাইফ এবং সসার (ইউএফও)। আসলে পৃথিবীতে কিংবা পৃথিবীর বাহিরে অন্য কোন গ্রহ বা উপগ্রহে এলিয়েনের উপস্থিতি খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা প্রায় শতাব্দী ব্যাপী নিবিড়ভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অতি উচ্চ প্রযুক্তির ডিভাইস বা সিস্টেম ব্যবহার করেও বিজ্ঞানীরা আজ অব্ধি শুধু কিছুটা অনুমান করা ব্যতীত নির্ভুল কোন তথ্য উপাত্ত হাজির করতে পারেননি। তবে বাস্তব জীবনে এলিয়েনেরে দেখা না মিললেও হলিউডের সাইফাই সিনেমা ও কাল্পনিক উপন্যাসের জগতে এলিয়েনের সাবলীল উপস্থিতি কিন্তু বেশ চোখে পড়ার মতো।

 

 

 

 

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমেরিকা বা বিশ্বের অন্য কোনো অঞ্চলে বা দেশে মাঝে মধ্যেই কথিত এলিয়েনদের ইউএফও, সরারের মতো সে বস্তুগুলো দেখা যায় তার অধিকাংশ কিন্তু হয় গুজব, প্রোপাগান্ডা কিংবা ফটোশপ এডিটেড ইমেজ ও ভিডিও হয়ে থাকতে পারে। এদিকে এলিয়েন লাইফ নিয়ে বিগত পাঁচ দশকে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করেছে কিংবা আগ্রহ দেখিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। আর এ কাজে তারা কিন্তু ইতোমধ্যেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

 

 

 

 

এমনকি কয়েক বছর আগেও বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে, উন্নত সভ্যতার এলিয়েনের সাথে সরাসরি যোগাযোগের একেবারে দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে আমেরিকার মিডিয়ার কল্যাণে এলিয়েনের আগমনের গুজব বা প্রোপাগান্ডা খুব দ্রুত এবং বিশ্বাস করার মতো উপযোগী করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয় পশ্চিমা মিডিয়াগুলো। তাছাড়া বর্তমানে আমেরিকার দক্ষিণ নেভাদার নির্জন মরুভূমির গ্রুম লেকে অবস্থিত রহস্যময় এরিয়া-৫১ হল একটি মার্কিন বিমান বাহিনীর গোপন গবেষণা কেন্দ্র। যেখানে কিনা আন-আইডেন্টিইফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট (ইউএফও) সাথে যোগাযোগ কিংবা এলিয়েন লাইফ নিয়ে গবেষণার মতো গুজবের জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছে।

 

 

 

 

এখানে প্রকাশ থাকে যে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে কিংবা অন্য কোন গ্রহে বুদ্ধিমান এলিয়েন সভ্যতা রয়েছে এমন কোন প্রমাণ শুধু এক অনুমান ব্যতীত এখনো পর্যন্ত সরাসরি খুঁজে পাননি। তাছাড়া সিনেমা বা মিডিয়ায় এলিয়েনের যে অবাস্তব শারীরিক আকৃতির ছবি প্রচার করা হয় তা কিন্তু যুক্তি সংগত কারণেই অতি উন্নত কোন সভ্যতার এলিয়েনের হওয়ার সম্ভবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে শুধু আমাদের আকাশ গঙ্গা ছায়াপথে থাকা প্রায় ১ ট্রিলিয়নের অধিক গ্রহ অ উপগ্রহে এলিয়েন লাইফ টিকে থাকাটা কিন্তু মোটেও অবাস্তব কিছু নয়। আর এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব নিয়ে এখনো পর্যন্ত ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।

 

 

 

 

আসলে হলিউডের সিনেমায় কিংবা মিডিয়ায় এলিয়েনের যে কাল্পনিক ভয়ংকর শারীরিক আকার ও ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখানো হয় তা দিয়ে আর যাই হোক উন্নত কোন এলিয়েন সভ্যতার ক্রিয়েচার হিসেবে হাইলি অ্যাডভান্স প্রযুক্তি তৈরি বা পরিচালনা করার উপযোগী হতে পারে না। আর বিশেষ করে টাইপ টু এর মতো উন্নত সভ্যতা গড়ার ক্ষেত্রে শুধু মেধা ও উন্নত মস্তিষ্ক থাকাটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিকোশিত সাবলীল শারীরিক গঠন ও আকার পর্যায়ক্রমে অতি উন্নত টাইপ টু পর্যায়ের সভ্যতা বিকোশিত করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

 

 

 

এখানে প্রকাশ থাকে যে, বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ কিংবা ষাটের দশকে আমেরিকার মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে, তাদের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা নাকি মঙ্গল গ্রহে নাকি বেশ কয়েকটি প্রবহমান নদী দেখতে পেয়েছে। আবার নাসা সেই সময়ে দাবি করেছিল যে, সেখানে নাকি তারা এলিয়েনদের কলোনি খুঁজে পেয়েছে। যা সেই সময়ে পশ্চিমা মিডিয়ার টিভি ও নিউজপেপারে এ সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডা নিউজ এক রকম নিয়মিতভাবে প্রচার করা হতো। আর এ সংক্রান্ত কিছু কাল্পনিক লেখা আবার নব্বইয়ের দশকের দিকে নিউজপেপার কিংবা সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশ হয়েছিল, যদিও বর্তমানে এখন গুগলে সার্চ করেও এ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুই হয়ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।

 

 

 

 

আসলে বাস্তবে এলিয়েন লাইফ সংক্রান্ত বিষয়টি এমনও হতে পারে যে, বিংশ শতাব্দীর প্রবল প্রতাপশালী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে কিছুটা বোকা বানানো এবং নিজের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অতিরঞ্জিত করে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করা পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল। তার পাশাপাশি হয়ত সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে বিশ্বের সামনে যতটা সম্ভব ম্লান করে দিতে অনেক অতিরঞ্জিত তথ্য উপাত্ত বিশ্বের সামনে এনেছিল তারা। আর তার একটি হয়ত উন্নত পর্যায়ের প্রোপাগান্ডা হতে পারে এই এলিয়েন লাইফ একজিসট্যান্ট।

 

 

 

 

তবে এটা স্বীকার করতে হয় যে, মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মানব জাতি কিন্তু অবিশ্বাস্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে নাসা ও ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির পাঠানো অতি উচ্চ প্রযুক্তির হাবল, জেমস ওয়েব ও ইউক্লিড টেলিস্কোপ হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকা মহাবিশ্বের গঠন এবং অজানা রহস্য মানব জাতির কাছে প্রতিনিয়ত উন্মোচন করে যাচ্ছে। যার অবদান কিন্তু অস্বীকার করার কোন সুযোগ থাকে না। যদিও এখনো পর্যন্ত তিন থেকে চারজন নভোচারী নিয়ে অসীম মহাকাশে ছুটে বেড়ানোর মতো শক্তিশালী মহাকাশযান ডিজাইন এবং তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

 

 

 

 

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি, স্পেস.কম, ইউকীপিডিয়া, সিএনএন, নিউজ নেশন।

 

 


 

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, বিনগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmai.com

Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?

এবার আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে তুরস্কঃ