রাশিয়ার লং রেঞ্জের এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের চালান গ্রহণ করেছে ইরান!

ইরান সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে কিছু সংখ্যক ইউনিট লং রেঞ্জের এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের চালান গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে ইরানের সামরিক বাহিনী এই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাদের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর ইসফাহানে মোতায়েন করেছে এবং খুব সম্ভবত গত ২৬ জুলাই এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য কয়েকটি সফল পরীক্ষা পরিচালনা করেছে। ইসফাহানের নিউক্লিয়ার ফ্যাসালিটির কাছে বা আশেপাশের সামরিক ঘাঁটিতে পরিচালিত এই লাইভ-ফায়ার মহড়ার মাধ্যমে ইরান মূলত ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং উপসাগরীয় মিত্রদের সম্ভাব্য আকাশ হামলার বিরুদ্ধে একটি শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার বার্তা দিতে চায়। যদিও এখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রথম সারির মিডিয়াতে এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ হয়নি। তবে এখনো স্পষ্ট নয় যে, রাশিয়ার এই এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি ইরান সরাসরি ক্রয় করেছে, নাকি রাশিয়ার সামরিক বাহিনী (বিশেষ করে এয়ার ফোর্স) অপারেশনাল সক্ষমতা বিশ্বের সামনে প্রকাশ কিংবা পর্যালোচনার অংশ হিসেবে ইরানে এটি মোতায়েন করেছে। যাই হোক, এই নতুন পদক্ষেপ ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে সহায়তা করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, প্রায় বছর খানেক আগে রাশিয়া ইরানকে এস-৪০০ সিস্টেম অফার করলেও তেহরান তা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে দেয়। সে সময় ইরান এস-৪০০-এর পরিবর্তে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি বাভার-৩৭৩ এবং অন্যান্য স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের আধুনিকায়নে বেশি মনোযোগ দেয়। তবে গত জুন মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে ইরানের সীমিত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। যুদ্ধের প্রথম দিকে ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, তাদের নিজস্ব বাভার-৩৭৩ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইসরায়েলের ২-৩টি এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেট শনাক্ত করে ধ্বংস করেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণ বা বাস্তব তথ্য সামনে আসেনি, ফলে এটি এখনো সন্দেহের পর্যায়ে রয়ে গেছে। উল্লেখ্য যে, ইরান ব্যালিস্টিক মিসাইল ও কমব্যাট ড্রোন ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও শক্তিশালী আকাশ হামলা চালালেও তার বিমান বাহিনী ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা কিন্তু বিশ্বের সামনে সহজেই ফুটে ওঠে। বিশেষ করে ইরানের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা অচল করে দিয়ে যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় প্রায় বাধাবিহীনভাবে এয়ার স্ট্রাইক চালিয়ে যায়। যুদ্ধের এই বাস্তবতা ও নিজস্ব সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেই ইরান এখন সম্ভবত যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করতে চাইছে। দেশটি ইতোমধ্যে চীনের কাছ থেকে অজানা সংখ্যক ইউনিট এইচকিউ-৯বি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি, রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সামরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে এস-৪০০ সিস্টেম ক্রয়ের বিষয়টি চুড়ান্ত করেছে ইরান। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, চলতি ২০২৫ সালের জুন মাসের ভয়াবহ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান এস-৪০০ ক্রয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এত অল্প সময়ে নিজস্ব বাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় এটি আপাতত রাশিয়ান প্রযুক্তিবিদ ও অপারেটরদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগেও ইরান ২০১৬ সাল থেকে রাশিয়ার তৈরি পুরনো এস-৩০০পিএমইউ-২ সিরিজের মধ্যম পাল্লার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পরিচালনা করে আসছে। তবে সম্প্রতি সংঘাতে এই সিস্টেমের উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়নি। বিশেষ করে আধুনিক যুদ্ধ কৌশল ও ইলেকট্রনিক জ্যামারের কারণে হয়ত ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হয়। (তথ্য ও ছবি সংগৃহীত) তথ্যসূত্র: ডিফেন্স মিরর, মিলিটারি ওয়ার্চ ম্যাগাজিন, ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া, ইউনাইটেড২৪মিডিয়া, দ্য এশিয়া লাইভ। লেখক পরিচিতি: সিরাজুর রহমান শিক্ষক ও লেখক সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

ইএল ক্যাপ্টেন' এক অবিশ্বাস্য দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার!

ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তায় মোবাইল নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের বিপ্লব!

চীন কিভাবে তার বিদ্যুৎ শক্তিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত করল?