রেহিঙ্গা মানবিক সংকটের আড়ালে বৈশ্বিক ক্ষমতাধর দেশগুলর অশুভ প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা!

রেহিঙ্গা মানবিক সংকটের আড়ালে বৈশ্বিক ক্ষমতাধর দেশগুলর অশুভ প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা! 
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া বলেছে, “রেহিঙ্গা নিধন এবং বিতারণ ইস্যুতে সকল সমস্যা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে”। অথচ রেহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা কিন্তু বাংলাদেশের কোন নাগরিক নয় এবং এ সমস্যার শতভাগ মিয়ানমারের তরফে সৃষ্টি। তাই রেহিঙ্গা নিধন সমস্যা এখন অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই সমাধান করতে হবে। তাই রাশিয়ার এহেন হাস্যকর এবং অবিবেচক উক্তি কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। যেখানে রাশিয়া এবং চীন নিজেরাই কিনা মিয়ানমারের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং মদদদাতা।

এদিকে মিয়ানমার বৈশ্বিক পর্যায়ে এক রকম অং সাং সূচী সরকার ও তাদের সেনবাহিনীর মদদেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার এবং গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আর বৈশ্বিক পর্যায়ে মিয়ানমারকে এহেন অপকর্মে চূড়ান্তভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে আমাদের বন্ধু দেশ রাশিয়া, চীন এবং ভারত। এমনকী তারা মিয়ানমারকে নির্বিচারে প্রাণঘাতী যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ করে সারা দেশজুড়ে ক্ষুদ্র জাতি নৃ-গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন এবং উচ্ছেদে যুগের পর যুগ উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে এবং যে যার মতো করে প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে রয়েছে। যেখানে, সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে এ দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা সমাধানে যথেষ্ঠ সুযোগ থাকলেও তা কোন ভাবেই কাজে লাগানো হচ্ছে বলে মনে হয় না।

অন্যদিকে, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সরকারের এহেন গণহত্যায় তীব্র প্রতিবাদের পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রস্তাব তুললেও তাতে রাশিয়া এবং চীনের বারবার ভেটো প্রদান এবং বিরধিতার মুখে মিয়ানমার সরকারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং গণহত্যা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে চীন এবং রাশিয়ার অনেকটা পরোক্ষ মদদেই মিয়ানমারের সরাসরি বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান এবং অপপ্রচার অতীতের যে কোন সময়ের চূড়ান্ত সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। আর এতদ অঞ্চলে এক ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে উঠে রাশিয়া, চীন এবং আমাদের পাশ্ববর্তী বন্ধুদেশ ভারতও কিন্তু মিয়ানমার ইস্যুতে পরোক্ষভাবে হলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এ দেশগুলো কার্যত আমাদের উপর এক ভয়াবহ যুদ্ধের বোঝা চাপিয়ে দিতে চেষ্টার কোন কমতি করছে বলে মনে হয় না।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, মিয়ানমার সরকার শুধু মুসলিম রেহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী নিধন এবং বিতারণ করছে বিষয়টা তা কিন্তু নয়। বরং এ মুহুর্তে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রেহিঙ্গা ছাড়াও সান, কাচিন এবং আরো বেশকিছু ক্ষুদ্র জাতি নৃ-গোষ্ঠী নিধণ এবং উচ্ছেদে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। রেহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীরাই শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তাছাড়া যুদ্ধরত সান, কাচিন এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতি নৃ-জোষ্ঠীরা কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী কিম্বা অন্য কোনো ধর্মের। তাই অং সাং সূচী সরকার তাদের দেশে ধর্ম ভিত্তিক অশুভ বিভাজন সৃষ্টিকে এক ধরণের হাতিয়ার এবং অপকৌশল হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে বলেই প্রতিয়মান হয়।

অন্যদিকে চীন কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে মিয়ানমারককে যুদ্ধে জড়িয়ে এবং এক রকম কৃত্রিম অস্থিতিশীল সৃষ্টি করে হলেও আগামী দুই দশকে বঙ্গপোসাগর সংল্গন মিয়ানমারের বিশাল এলাকা নিজ দখলে নিয়ে সরাসরি বঙ্গপোসাগর এবং ভারত মহাসাগরে প্রবেশের এক মহা পরিকল্পনা নিয়ে গোপনে কাজ করে যাচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে ধীরে ধীরে চীন মিয়ানমারকে গ্রাস করতে শুরু করে দিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের আড়ালে মিয়ানমারে চীনের সামরিক উপস্থিতি বেশ জোড়ালো হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বঙ্গোপোসাগরে চীনের নেভাল ফ্লীটের সরাসরি প্রবেশ করা এখন অনেকটাই সময়ের ব্যাপার মাত্র। যা ভবিষ্যতে ভারতের জন্য মোটেও ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না।
মিয়ানমার ইস্যুতে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা বিতর্কিত হলেও এখানে ভারত মুলত মিয়ানমারের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে যতটা সম্ভব নিজস্ব প্রভাব বিস্তার করা এবং যে কোন মূল্যে বঙ্গপোসাগরে চীনের সরাসরি প্রবেশ এবং সামরিক উপস্থিতি প্রতিহত করা। আর এহেন প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে উঠে বন্ধুত্ব রক্ষার তাগিদে এবং নিজ স্বার্থ হাসিলে ভারত কিন্তু মিয়ানমারের হাতে অর্থ, প্রাণঘাতী যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম তুলে দিতে কোন রকম কার্পণ্য করছে বলে মনে হয় না। আর এখন মিয়ানমারের হাতে থাকা এসব চীনা, ভারতীয় কিম্বা রাশিয়ান যুদ্ধাস্ত্রের মূল টার্গেট কিন্তু অনেকটাই বাংলাদেশ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

খেয়াল করার মতো একটি বিষয় হলো যে, রাশিয়া এক দিকে মিয়ানমারের হাতে এসইউ-৩০ জেট ফাইটারসহ নির্বিচারে অন্যান্য প্রাণঘাতী অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছে অন্যদিকে বাংলাদেশের কাছে তাদের সদ্য উৎপাদিত এবং নন-ব্যাটল প্রুভ মিগ-৩৫ জেট ফাইটার চড়া দামে বিক্রি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আসলে মিয়ানমার ইস্যুতে এখানে রাশিয়া কিন্তু আমাদের সাথে ডবল গেম প্লে করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার গভীর বন্ধুভাবাপন্ন এবং বানিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যামান রয়েছে বলে মনে করা হলেও মার্কিন বিরোধী শিবির হওয়ায় মিয়ানমারের সাথে রাশিয়ার রয়েছে পুরো মাত্রায় কৌশলগত সম্পর্ক। আবার আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে চীনের অস্ত্র রপ্তানির মূল টার্গেট কিন্তু বাংলাদেশ। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার মানে চীন ও রাশিয়া এক দিকে বাংলাদেশের কাছে চড়া দামে অস্ত্র বিক্রি করবে। অন্যদিকে তাদেরই যুদ্ধাস্ত্র আবার মিয়ানমারে থাকা জাতিগোষ্ঠী নিধনে এবং বিশেষ করে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নির্বিচারে মিয়ানমারের হাতে তুলে দিবে। আবার তারাই হবে কিনা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, যা এক বিংশ শতাব্দির একটি আধুনিক তামাশা কিম্বা প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?

এবার আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে তুরস্কঃ