বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও অত্যন্ত ধ্বংস ক্ষমতাসম্পন্ন অপারমাণবিক অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) বা জিইউবি-৪৩/বি।
বর্তমানে সার্ভিসে থাকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও অত্যন্ত ধ্বংস ক্ষমতাসম্পন্ন অপারমাণবিক বোমা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) বা জিইউবি-৪৩/বি। যাকে অবশ্য 'মাদার অব অল বোম্বস' নামে বিবেচনা করা হয়। কার্যত মার্কিন বিমান বাহিনীর হাতে থাকা বিশাল আকারের ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) বা জিইউবি-৪৩/বি এক্সপ্লসিভ ডিভাইসটিকে পৃথিবীর ভূ- ভাগে ১১ টন টিএনটি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এতদিন মোয়াব নিয়ে পূর্বের সকল মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত গোপনীয়াত অবলম্বন করে চললেও ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিলে আফগানিস্তানে জঙ্গি আস্তানায় সরাসরি মোয়াব নিক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন ট্রাম্প বাহিনী প্রকাশ্যে নিজের উচ্চ মাত্রায় ভয়ঙ্কর সামরিক সক্ষমতা বিশ্বের কাছে নতুন করে তুলে ধরল। এখানে প্রকাশযোগ্য যে, মার্কিন বিমান বাহিনীর মোয়াব আক্রমন যে শুধুমাত্র আফগানিস্তানে জঙ্গি দমনে ব্যবহার করা হয়েছে বাস্তবে তা কিন্তু নয়। আসলে মোয়াব প্রকাশ্যে এনে ট্রাম্প প্রশাসন কার্যত রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইরানকে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করে যে, ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মার্কিন বাহিনী মোয়াব বা এর চেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র প্রয়োগে কোন রকম পিছ পা হবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি ২০০২ সালে ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) জিইউবি-৪৩/বি “মাদার অব অল বোম্বস” এর ডিজাইন সম্পন্ন করে এবং ম্যাকলেস্টার আর্মি এমুনিউশন প্লান্টে অত্যন্ত গোপনে ২০০৩ সাল থেকে এর উতপাদন শুরু করা হয়। খুব সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ২০-২৫টি হাই এক্সপ্লুসিভ নন-নিউক্লিয়ার (মোয়াব) তৈরি সম্পন্ন করেছে বলে মনে করা হয়। ৯,৮০০ কেজি বা ২১,৬০০ পাউন্ড ওজনের ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) জিইউবি-৪৩/বি কে মার্কিন সি-১৩০ হারকিউলিকস/এমসি-১৩০এইচ সামরিক পরিবহণ বিমান থেকে নিক্ষেপ করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৯.৮৮৫ মিটার এবং ব্যাস ১০৩ সেন্টিমিটার। এছাড়া, মোয়াব এর ভয়ঙ্কর ১১ টন টিএনটি বিস্ফোরণ ক্ষমতা থাকায় বিশ্বের যে কোন অপারমানবিক বোমা এর কাছে একেবারেই তুচ্ছ বলে মনে হবে। প্রতি ইউনিট মোয়াব এর উৎপাদন খরচ ১.৭০- ২.০০ মিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি হতে পারে। আর উচ্চ ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় মার্কিন বাহিনী মোয়াবকে দ্বিতীয় কোন দেশে বিক্রয় বা হস্তান্তর করবে না।
“মাদার অব অল বোম্বস” খ্যাত মোয়াব বিস্ফোরণ হওয়ার মুহুর্তের মধ্যেই প্রবল ভূমিকম্পের মতো একটা শক ওয়েভ সৃষ্টি করে। মোয়াব এর বিস্ফোরণে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি মাটির নিচে থাকা ৩০০ ফুটের মধ্যে যে কোন ব্যাংকার বা স্থাপনা নিমিশেই ধংস করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। মোয়াব এর আঘাতে এক মাইল ব্যাসের মধ্যে থাকা যে কোন ধরণের বাড়ি, স্থাপনা, যানবাহণ ধ্বংস করতে পারে। আবার মোয়াব এর শক ওয়েভের আঘাতে ১.৭ মাইল ব্যাসের মধ্যে থাকা মানুষ বা অন্য প্রাণির নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারে এবং দুই মাইল পর্যন্ত এলাকার মধ্যে থাকা মানুষের শ্রবণশক্তি মারাত্বক ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) জিইউবি-৪৩/বি “মাদার অব অল বোম্বস” এর একাধিক গোপন পরীক্ষা সম্পন্ন করলেও তা বাস্তব কোন যুদ্ধে প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসায় তাদের সামরিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু করে। আর তারই ধারাবাহিকতায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ১৩ই এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মানব যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো আফগানিস্তানে জঙ্গি আস্তানায় সরাসরি মোয়াব নিক্ষেপের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জাপানের উপর লিটলবয় ও ফ্যাটম্যান নামক অতি ভয়ানক এটম বোমা প্রয়োগের মতো নতুন করে আবারো নিজের সামরিক সক্ষমতা বিশ্বের কাছে প্রকাশ করেছে বলে মনে করা হয়।
এখানে মজার বিষয় হলো, মার্কিন বিমান বাহিনীর মোয়াব আক্রমনের সাত দিনের মাথায় বিশ্বের আরেক অন্যতম সামরিক পরাশক্তি রাশিয়া তাদের কাছে থাকা ১৫ টন ওজনের বিশ্বের সর্ব বৃহৎ অপারমানবিক বোমা থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে এবং এটিকে তারা ফাদার অব অল বোম্বস বলে ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু করে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোয়াবকে মাদার অবল বোম্বস বলা হলেও মোয়ার এর প্রকৃত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত অর্থ হচ্ছে ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) বা জিইউবি-৪৩/বি। যেখানে রাশিয়ার কথিত (ফোয়াব) বা ফাদার অব অল বোম্বস এর প্রকৃত বিজ্ঞান ভিত্তিক কোন অর্থই প্রকাশ করে না এবং রাশিয়া এখনো পর্যন্ত তাদের উৎপাদিত “ফাদার অফ অল বোম্বস” খ্যাত অতি ভয়ঙ্কর অস্ত্রটিকে বাস্তবে প্রকশ্যে আনতে সক্ষম হয়েছে বা বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পেরেছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া রাশিয়া কিন্তু সর্বদা তাদের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে প্রচার মাধম্যে অতিরঞ্জিত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে থাকে। যা বাস্তবের সাথে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, ছোট চৌগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
Comments
Post a Comment