এবার আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে তুরস্কঃ
রয়টার্স নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে তুরস্কের কাছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিরুদ্ধে আনীত প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ৭৯টি এবং পক্ষে ১৩টি মাত্র ভোট দিলে তুরস্কের কাছে নতুন যুদ্ধবিমান বিক্রয় এবং মর্ডানাইজেশন কিটস সরবরাহের বিরুদ্ধে আনীত বিলটি খারিজ হয়ে যায়। এর ফলে তুরস্কের কাছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রির উপর উপর এখন আপাতত আর কোন আইনগত বাধা রইল না।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তুরস্কের কাছে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের নতুন ৪০টি এফ-১৬ (ব্লক-৭০/৭২) ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান এবং ৭৯টি যুদ্ধবিমানের মর্ডানাইজেশন কিটস রপ্তানির বিষয়ে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। মূলত গত জানুয়ারি মাসে ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্য পদ প্রাপ্তির বিষয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সম্মতি জানানোর পরই দেশটির কাছে যুদ্ধবিমান সরবরাহের ঘোষণা দেয় বাইডেন প্রশাসন। তুরস্ক আসলে এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান প্রজেক্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার পর গত ২০২১ সালে এই যুদ্ধবিমান ক্রয়ের জন্য নতুন করে আমেরিকার কাছে প্রস্তাব পাঠায়।
চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন তুরস্কের কাছে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪০টি নতুন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং ৭৯টি মর্ডানাইজেশন কিটস বিক্রির অনুমোদন দেয়। আবার তার পাশাপাশি একই সময়ে গ্রীসের হেলেনিক বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ৮.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪০টি হাইলি অ্যাডভান্স এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান রপ্তানির অনুমোদন দেয়। তবে শুরু থেকেই গ্রীসের কাছে এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়ে আমেরিকার সকল আইন প্রণেতারা সম্মতি জানালেও তুরস্কের কাছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিষয়ে অনেকেই প্রবলভাবে আপত্তি জানাতে থাকে।
গত জানুয়ারি মাসেই তুরস্কের কাছে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪০টি নতুন এফ-১৬ (ব্লক-৭০/৭২) ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমানসহ ৭৯টি পুরোনো যুদ্ধবিমান মর্ডানাইজেশন কিটস রপ্তানির অনুমোদন দেয় আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন। এই ২৩ বিলিয়ন ডলার প্যাকেজ চুক্তিতে যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ৪৮টি এফ-১১০ আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন, ১৪৯টি এপিজি-৮৩ (এইএসএ) রাডার, ৯৫২টি ১৬২ কিলোমিটার রেঞ্জের এআইএম-১২০ (সি-৮) সিরিজের এয়ার টু এয়ার মিসাইল, ৪০১টি এআইএম-৯এক্স (ব্লক-২) শর্ট রেঞ্জের এয়ার টু এয়ার মিসাইল এবং ৯৬টি এজিএম-৮৮ই এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল ছাড়াও অজানা সংখ্যক ইলেক্ট্রনিক্স সুটসহ আরো বেশকিছু ডিফেন্স সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমানে তুরস্কের বিমান বাহিনীতে মোট ২৪৫টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে। যার আবার একটি বড় অংশই পুরোনো ব্লক ১৫, ২০ বা ৪০ সিরিজের তৈরি যুদ্ধবিমান। যা দিয়ে বড় ধরনের এয়ার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক তার বেশকিছু সংখ্যক পুরোনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপগ্রেড করে নিয়েছে। তাছাড়া দেশটি অতি সাম্প্রতিক সময়ে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি লাইট জেট ফাইটার/ট্রেনিং ‘হুরজেট’ যুদ্ধবিমান সার্ভিসে এনেছে। যা পর্যায়ক্রমে নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি অন্য দেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা এগিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির নতুন প্রজন্মের (কেএএএন) স্টেলথ যুদ্ধবিমান আগামী ২০২৭ সালের মধ্যেই সার্ভিসে আনতে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে দেশটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান লকহিড মার্টিন কর্পোরেশন ছাড়াও আরও ৫টি দেশ তৈরি করে থাকে। এ দেশগুলো হলো তুরস্ক, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং জাপান। তবে এই দেশগুলো আসলে ঠিক তৈরি নয় বরং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অ্যাসেম্বলি করে থাকে। এদিকে তুরস্কের তার্কিস এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) ৯০ এর দশক থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তৈরি শুরু করলেও বাস্তবে এর ইঞ্জিন, অ্যাভিয়নিক্স সিস্টেম, রাডার, অস্ত্র ও অন্যান্য সকল গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আমেরিকা থেকে আমদানি করেই সংযোজন করে থাকে। তাই এখানে আসলে তুরস্কের নিজস্ব বড় ধরনের অর্জন বলতে তেমন কিছুই থাকে না।
সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman) সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।
Comments
Post a Comment