আমেরিকার তৈরি ৯৬টি এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ই এ্যাটাক হেলিকপ্টার ক্রয় করতে যাচ্ছে পোল্যান্ডঃ
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে পোল্যান্ড এবার মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশনের
কাছ থেকে ৯৬টি হাইলি এডভান্স এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ই সিরিজের এ্যাটাক হেলিকপ্টার ক্রয় করতে
যাচ্ছে। এই ৯৬টি কমব্যাট হেলিকপ্টারের ক্রয়ের চুক্তি মূল্য হবে কিনা ১২ বিলিয়ন ডলার।
অবশ্য এই ১২ বিলিয়ন ডলার চুক্তির মধ্যেই ট্রেনিং, লজিস্টিক সাপোর্ট, ওয়েপন্স প্যাকেজ,
স্পেয়ার পার্টস এবং রিপিয়ার এন্ড মেইনটেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তভূক্ত
করা হয়েছে। মূলত গত ২১শে আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিফেন্স সিকিউরিটি কর্পোরেশন
এজেন্সি ঘোষণা করে যে, মার্কিন বাইডেন প্রশাসন ও পেন্টাগন পোল্যান্ডের কাছে নতুন করে
৯৬টি ডেডিকেটেড হেলিকপ্টার রপ্তানির বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয়।
গত ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে পোল্যান্ডের সরকার এই হেলিকপ্টার ক্রয়ের জন্য মার্কিন প্রশাসনের কাছে বিশেষ প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। আর সেই প্রস্তাবে সারা বিয়ে আমেরিকা এবার তার আইনগত বৈধতা দিতে যাচ্ছে। এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০২০ সালে অর্ডারকৃত মোট ৬টি এএইচ-৬৪ই সিরিজের এ্যাপাচি হেভি কমব্যাট হেলিকপ্টার ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করেছে মার্কিন এভিয়েশন জায়ান্ট বোয়িং কর্পোরেশন। উৎপাদন শেষ হলে তারা আগামী ২০২৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে।
প্রতিটি বোয়িং এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ এ্যাটাক হেলিকপ্টারের আন্তজার্জাতিক বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার। তবে ক্রেতা দেশের নিজস্ব চাহিদা মাফিক কাস্টমাইজড করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে অস্ত্র ক্রয়ের উপর এর দাম অনেকটাই নির্ভর করে। বিশেষ করে মিসাইল, এমিউনেশন, লজিস্টিক সাপোর্ট, ট্রেনিং এবং স্পেয়ার পার্টস সরবরাহ ও রিপিয়ার এণ্ড মেইন্টেনেন্সের মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তভূক্ত করে ক্রয় করা হলে এর দাম ৬৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যেতে পারে।
এটিতে বর্তমানে উচ্চ প্রযুক্তির হেলমেট মাউনটেণ্ট ডিসপ্লে সিস্টেম সজ্জিত করা হয়েছে। তাছাড়া এর সম্মুখে ১,২০০ রাউণ্ডের ৩০ এমএম এম২৩০ চেইন গান সংযুক্ত করা আছে। এর সম্মুখে নোজ মাউনটেন্ট সেন্সর সুইট ফর টার্গেট একিউজেশন এণ্ড নাইট ভিশন সিস্টেম ইন্সটল করা রয়েছে। যা দিয়ে মূলত এম২৩০ চেইন গানকে কার্যকরভাবে ব্যাবহার করা হয়। এটিকে দিনে-রাতে এবং যে কোন প্রতিকূল আবহাওয়ায় কমব্যাট মিশন পরিচালনার করতে সক্ষম। এর চারটি হার্ড পয়েন্টে গ্রাউণ্ড এট্যাক মিশনের জন্য হাইড্রা ৭০ এমএম, সিআরভি-৭ ৭০ এমএম এবং এপিকেডাব্লিউএস ৭০ এমএম রকেট পড ব্যাবহার করা হয়। তাছাড়া মূল অস্ত্র হিসেবে অত্যাধুনিক এজিএম-১১৪ হেলফায়ার মিসাইল, এআইএম-৯২ স্টিংগার এবং স্পাইক মিসাইল ব্যবহার করা হয়।
আমেরিকার সেনাবাহিনী বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় ১,২০০টি এডভান্স এএইচ-৬৪ এট্যাক হেলিকপ্টার ব্যাবহার করে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাতিত বিশ্বের ১৭টি দেশ বিভিন্ন ক্যাটাগরির এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ এট্যাক হেলিকপ্টারের এক্সপোর্ট ভার্সন ব্যাবহার করে। তার মধ্যে জাপান, সৌদি আরব, ভারত, ইসরাইল, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত এবং মিশর অন্যতম। তাছাড়া ১৭ তম দেশ হিসেবে মরক্কোর কাছে মোট ২৪টি এই জাতীয় এট্যাক হেলিকপ্টার ২০২৪ সালে প্রথম ব্যাচে হস্তান্তর করবে মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশন। তাছাড়া ভারতের বিমান বাহিনী কিন্তু ইতোমধ্যেই ১.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ক্রয়কৃত মোট ২২টি ই সিরিজের এ্যাপাচি হেলিকপ্টারের অপারেট করে।
এএইচ-৬৪ এডভান্স এ্যাপাচি এ্যাটাক হেলিকপ্টার মার্কিন সেনাবাহিনীতে প্রথম ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে সার্ভিসে আসলেও এর সরাসরি কমব্যাট মিশন শুরু হয় ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের মাধ্যমে। বিশেষ করে ১৯৯১ উপসাগরীয় যুদ্ধে এক গোপনীয় কমব্যাট মিশনে প্রথমবারের মতো ৮টি এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ এট্যাক হেলিকপ্টার একত্রে কুয়েতে থাকা ইরাকের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস করে যুদ্ধ জয়ের যাত্রা শুরু করে। আর এভাবে এ্যাপাচি হেলিকপ্টারের হাত ধরেই ১৯৯১ সালে মধ্যপ্রাচ্যে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এক উপসাগরীয় যুদ্ধের (গালফ ওয়ার) সূচনা হয়।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
Comments
Post a Comment