ফরেক্স রিজার্ভ নিয়ে চাপে চাপে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো:
বর্তমানে স্বল্প আয়ের একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বৈদেশিক দায় ও আমদানি ব্যয় পরিশোধের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে অন্য কোন দেশের শক্তিশালী মুদ্রা স্থান করে নিতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, গত ৩১শে আগস্ট বাংলাদেশের নীট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২৩.০৬ বিলিয়ন ডলার এসে ঠেকেছে।
যেখানে চলতি ২০২৩ সালের ৩১শে জুলাই এর হিসেবে অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৩.৩৪ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া চলতি সেপ্টেম্বর মাসের আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং হাউজের (আকু) ১.০২ বিলিয়ন ডলারের দেনা পরিশোধ করার পর হয়ত বাংলাদেশের নীট বা ব্যবহার যোগ্য ফরেক্স রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারে নিচে নেমে যেতে পারে। তবে এটা হচ্ছে একটি দেশের বৈদেশিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। যা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক বা সমালোচনা করার কোন সুযোগ থাকে না। তবে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় আমাদের আরো সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
বিশেষ করে চলমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বা অস্থিরতার কারণে আজ সারা বিশ্বের অধিকাংশ স্বল্প আয়ের ও উন্নয়নশীল দেশের ফরেক্স রিজার্ভে টান পড়েছে। এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, ২০০২ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল মাত্র ১.৭২ বিলিয়ন ডলার, ২০১০ সালে তা ছিল ১১.১৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৩ সালে ১৮.০৯ বিলিয়ন ডলার।
আবার গত ৩১শে আগস্ট এক ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রা ১০৯.৫০ টাকাতে লেনদেন হয়। যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭.৮৭৬৩ টাকা এবং তার ঠিক ৩২ বছর পর ২০০৪ সালে এক ডলারের বিপরীতে টাকার মান অনেকটাই হ্রাস পেয়ে ৫৯.৬৯ টাকা টাকায় লেনদেন হয়। আর চলতি ২০২৩ সালে এসে টাকার মানের অবমূল্যায়ন হয়ে আরো ১০৯.৫ টাকায় নেমে এসেছে।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের ফরেক্স রিজার্ভ গত কয়েক মাস বৃদ্ধি পাওয়ার পর চলতি ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যেতে শুরু করে। মূলত রিজার্ভ ব্যাংক অব ইণ্ডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, গত ১৮ই আগস্টের হিসেব অনুযায়ী ভারতের ফরেক্স রিজার্ভ ৭.২৮ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়ে ৫৯৪.৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়।
অথচ গত ১১ই আগস্টে ভারতের ফরেক্স রিজার্ভ ছিল ৬০২.২ বিলিয়ন ডলার। বড় অংকের আমদানি ব্যয় ও দেনা পরিশোধ করার জন্য ভারতের ফরেক্স রিজার্ভ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এটি একেবারে সাময়িক একটি বিষয়। যা পরবর্তীতে ভারতের ফরেক্স রিজার্ভ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এদিকে আজ ২রা সেপ্টেম্বরে এক ডলারের বিপরীতে দেশটির নিজস্ব মুদ্রার মান কিছুটা হ্রাস পেয়ে ৮২.৭২ রুপিতে লেনদেন হয়।
তাছাড়া সেন্ট্রাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের দেয়া তথ্যমতে, গত ১৮ই আগস্ট ২০২৩ এর হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭.৯ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া দেশটির নিজস্ব মুদ্রা রুপি ডলারের বিপরীতে রেকর্ড পরিমাণ মান হারিয়ে গত ৩১শে আগস্টে ৩০৫.৬ রুপিতে লেনদেন হয়। এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, বর্তমানে পাকিস্তান এখন কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণভাবে এক দেশ থেকে ঋন নিয়ে অন্য কোন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋন ও দেনা পরিশোধ করছে। যা কোন দেশের দীর্ঘ মেয়াদি অর্থনীতির জন্য একটি স্থিতিশীল কর্মকাণ্ড হতে পারে না।
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কার জাতীয় অর্থনীতি বিগত তিন বছরের সংকট কাটিয়ে এখন অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিশেষ করে গত ২০২০ সাল থেকেই ভয়াবহ রকমের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে যায় শ্রীলংকা। চলতি ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী শ্রীলংকার নমিনাল জিডিপি’র আকার ৭৫.৩ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ৪১.৫ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে দেশটির জিডিপি’র অনুপাতে বৈদেশিক ঋনের হার ৫৫.১১৩%। আর শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৩.৪ বিলিয়ন ডলার এবং সোনার মজুত রয়েছে ৬.৭ টন। তাছাড়া আজ ২রা আগস্টের হিসেব অনুযায়ী প্রতি ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা রুপির মান ছিল ৩২১.৪৫ রুপী।
Comments
Post a Comment