আবারো ‘ঋন’ সংকটের মুখে আমেরিকাঃ
আসলে আমেরিকা বর্তমানে একমাত্র এমন এক দেশ, যার কিনা জিডিপি'র আকার চলতি ২০২৩
সালের হিসেব অনুযায়ী ২৬.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও মোট ঋন ও দেনার পরিমাণ কিনা এখন ৩৩ ট্রিলিয়ন
ডলারের সীমাকে অতিক্রম করেছে। তার মানে মোট ঋনের আকার জিডিপির তুলনায় ১২৫.৭৬% বেশি।
এদিকে অর্থনীতির ভাষায় একটি দেশের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ মোট জিডিপির আকারের
২০% পর্যন্ত সীমাকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত ঋন সীমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও আমেরিকার
প্রকৃত বৈদেশিক ঋন ও দেনার আকার অবশ্য ৭.৮ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ৮.২ ট্রিলিয়ন ডলার কাছাকাছি
হতে পারে। সে হিসেবে দেশটির বৈদেশিক ঋনের সীমা অবশ্য ৩৩% এর কাছাকাছি হয়ে যায়।
তবে আমেরিকার ঋন সীমা অর্থনীতির ভাষায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও বাস্তবে দেশটির নিজস্ব অর্থনীতি আর্থিক সক্ষমতা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও একেবারে ভেঙ্গে পড়ার মতো কোন জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে আমেরিকার নিজস্ব মুদ্রা ডলার এখনো পর্যন্ত সারা বিশ্বে দাপটের সাথে রাজত্ব করে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা খাত বার বার টিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বানিজ্য (আমদানি-রপ্তানি) লেনদেনের অন্যতম বিশ্বস্ত ফরেন কারেন্সি হচ্ছে ডলার।
অভ্যন্তরীন খাত থেকে মার্কিন বাইডেন প্রশাসনের ঋন গ্রহণের মাত্র ব্যাপক মাত্রায়
বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বৈদেশিক উৎস থেকে ঋন গ্রহন সেভাবে কিন্তু বৃদ্ধি পায়নি। যা
কিনা অনেকটাই আগের তো রয়ে গেছে। চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের এক হিসেব অনুযায়ী মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত মোট বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৭.৮ ট্রিলিয়ন
ডলার থেকে ৮.২ ট্রিলিয়ন ডলার। আর আমেরিকাকে বৈদেশিক ঋন দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার উপরে উঠে
এসেছে জাপানের নাম। গত জানুয়ারির হিসেব মতে আমেরিকার কাছে জাপানের দেয়া ঋনের স্থিতির
পরিমাণ কিনা ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার।
তাছাড়া আমেরিকার অন্যতম শত্রু ভাবাপন্ন দেশ চীনের প্রাপ্য ঋনের স্থিতি ৮৫৯
বিলিয়ন ডলার। তার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ৬৬৮ বিলিয়ন ডলার, বেলজিয়াম ৩৩১ বিলিয়ন ডলার এবং
লুক্সেমবার্গ ৩১৮ বিলিয়ন ডলারের সুদসহ ঋনের অর্থ পাবে আমেরিকার কাছ থেকে। আর আমেরিকাকে
ঋন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশকিছু দেশের নাম তালিকায় উঠে এসেছে। তবে আমেরিকার সার্বিক
অর্থনৈতিক সক্ষমতার তুলনায় বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ বর্তমানে চলমান মহামন্দার
কারণে কিছুটা হলেও নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে এখন নজিরবিহীন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি
ও বেকারত্বের হার বিরাজ করেছে। বিশেষ করে দেশটির অতি মাত্রায় যুদ্ধ প্রিয়তা ও রাশিয়াকে
দমন করার নামে জনগণের ট্যাক্সের শত শত বিলিয়ন ডলার ইউক্রেনের পিছনে ব্যয় করার ফলে এখন
বেশ বড় ধরণের আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
বর্তমানে বৈশ্বিক পর্যায়ে ডলারের প্রভাব ও ব্যবহার অনেকটা হ্রাস পেলেও এখনো পর্যন্ত কিন্তু ৫৮% বৈদেশিক লেনদেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারে সম্পন্ন করা হচ্ছে। যেখানে চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান বৈশ্বিক লেনদেনের মাত্র ২.৬৩% নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। আর তাই চীন এখনো পর্যন্ত কিন্তু নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রচলনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী কিংবা বিশ্বস্ত মুদ্রা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। উলটো চীন কিনা তাদের ৩.১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের (আগস্ট ২০২৩) ফরেক্স রিজার্ভের একটি বড় অংশ মজুত করে রেখেছে ডলারে। বলা হয়ে থাকে যে, আমেরিকা নয়, বরং এখন চীনের হাতেই রয়েছে ডলারের সবচেয়ে বেশি রিজার্ভ। তাছাড়া বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো একত্রে ‘ব্রিকস’ বা অন্য কোন অর্থনৈতিক জোট গঠন করা কিংবা মুখে যাই বলুক না কেন, তারা কিন্তু ঠিকই বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রাখার ক্ষেত্রে ডলারকেই কিন্তু সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত মনে করে।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।
sherazbd@gmail.com
Comments
Post a Comment