বর্তমানে কাশ্মিরের উরিতে ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ রকমের সামরিক উত্তেজনা এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মুলত কাশ্মির ইস্যুতে যে কোন মুহুর্তে ভারত ও পাকিস্তামের মধ্যে বড় ধরণের যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রবল আশাঙ্খা প্রকাশ করছেন আন্তজার্তিক সামরিক বিশ্লেষকেরা। আবার যে কোন ধরণের যুদ্ধ কে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ রকমের পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এছাড়া ভারত দাবি করেছে, কাশ্মিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সন্ত্রাসী হামলার জন্য প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তান দায়ী ও ভারতের তরফ থেকে কেউ কেউ পাকিস্তানে হামলা চালানোর মাধ্যমে এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবার কথা বলা হচ্ছে। এদিকে আবার পাকিস্তান পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ভারতকে মোটেও ভয় পায় না এবং যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতের উপর আনবিক অস্ত্র প্রয়োগে কোন রকম দ্বিধা করবেনা।
আসলে আজকের প্রবন্ধে আমি স্বল্প পরিসরে ভারত ও পাকিস্তানের প্রকৃত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সক্ষমতা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব। প্রথমে ভারতের আকাশ প্রতিওরক্ষা ব্যবস্থা ও ফিক্সড উইংস এয়ার ক্যাপাবিলিটি নিয়ে আলোচনা করা যাক। মুলত, ভারতে বিমান বাহিনীতে ইতোমধ্যেই সর্বমোট ২০৮৬ টির মতো বিমান সংযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে আনুমানিক ৭০০ টির মতো ফাইটার/ইন্টারসেপ্টর ও ৮০০ অধিক গ্রাউন্ড এট্যাক বা বোম্বারসহ আরো ৩৫০টি সামরিক পরিবহন বিমান সক্রিয় আছে। এছাড়া ৬৪৬টি সামরিক পরিবহণ হেলিকপ্টার এবং ৩০টি কমব্যাট হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক ভারতের আকাশ রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ সঽখ্যক চতুর্থ প্রজন্মের ২৪২টি এসিইউ-৩০ ব্যবহার করে। এছাড়া আরও ৪০টি এডভান্স এসইউ-৩০ অর্ডার করা হয়েছে। আবার আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সকল এসইউ-৩০ ফ্লীটকে আপগ্রেড করে সুপার সুখই এ রুপান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু করতে বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে ভারত সরকার। এছাড়া রয়েছে ৬৯টি মিগ-২৯, ১১০টি মিগ-২৭, ৬০টি মিরেজ-২০০০, ২৬০টি মিগ-২১, ১৪০টির মতো জাগুয়ার। আবার ভারতের মোদি সরকার অতি সম্প্রতি ফ্রান্স ৩৬টি ৪++ জেনারেশনের ডেসাল্ট রেফেল সংগ্রহের বিষয়টি চুড়ান্ত করেছে পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তিতে তেজাস এলসিএ এর প্রডাকশন ব্যাপক ভাবে শুরু করা হয়েছে এবং আশা করা যায় পরবর্তী ২০১৮ সালের মধ্যে ১০০টি তেজাস এলসিএ এর নতুন ভার্সন বিমান বাহিনীতে অন্তভুক্ত করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে সব মিগ-২১ কে অবসরে পাঠানো হবে এবং তার পরিবর্তে জেয়গা করে নিবে তেজাস এলসিএ।
আবার অন্যদিকে পাকিস্তানে বিমান বাহিনীতে সক্রিয় আছে সর্বোমোট ৯২৩টি বিমান। যার মধ্যে ৩০৪টি ফাইটার/ইন্টারসেপ্টর এবং ৩৯৪টি গ্রাউন্ড এট্যাক ফিক্সড উইংস রয়েছে। এছাড়া ১৭০টি প্রশিক্ষণ বিমান, ২৬১টি সামরিক পরিবহণ বিমান, ৩০৬টি সামরিক পরিবহণ হেলিকপ্টার এবং ৫২টি এট্যাক হেলিকপ্টার রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মূল মেরুদন্ড এফ-১৬ আছে ৭৬টি, ৯০টি জেএফ-১৭, ১৮৫টি এফ-৭, ৭৫টি মিরেজ-৩, ৮২টি মিরেজ-৫, কে-৮ প্রশিক্ষণ জেট ৬০টি। এছাড়া, এট্যাক হেলিকপ্টাররের মধ্যে রয়েছে ৩টি চীনের তৈরি জে-১০ এবং আরও ১৭টি অর্ডার করা আছে। পাশাপাশি এএইচ—১এফ/এস কোবরা আছে ৫০টি। তবে প্রকাশ থাকে যে, পাকিস্তান এখনো পর্যন্ত টুইন ইঞ্জিন বিশিষ্ট কোন জেট ফাইটারের ব্যবহার শুরু করতে পারেনি।
এবারে বিশ্লেষনের দিকটি বিবেচনা করা যাক। মুলত পরিসংখ্যানের হিসেব মতে পাকিস্তানের ফিক্সড উইংস এয়ার সক্ষমতা ভারতের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ এবং অধিকাং বিমান ৮০ দশকের পুরনো। তাছাড়া পাকিস্তান ৪++ জেনারেশনের টুইন ইঞ্জিনের লং রেঞ্জের ফাইটার এক রকম নেই বললেই চলে, যেখানে ভারতের বিমান বাহিনীতে ৩৫০টির অধিক শক্তিশালী টুইন ইঞ্জিনের লং রেঞ্জ এয়ার স্ট্রাইক এসইউ-৩০, মিগ-২৯ ফাইটার রয়েছে। তবে এটা ঠিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় ভারত কোন অবস্থাতেই তার আকাশ শক্তির ১০০% পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ পাবে না। যেখানে ভারতের মোট বিমান বহরের আনুমানিক ৩০% সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন ওভারহোলিং, রিপিয়ার এন্ড ম্যান্টেনেন্স ও আপগ্রেডিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকে। আবার, চীনের মতো বৈরি ভাবাপন্ন দেশের সামরিক হুমকি মোকাবেলায় ৩০% বিমান বিমান শক্তি গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটিতে সার্বক্ষণিক ভাবে মোতায়েন রাখতে হবে। তবে এটা ঠিক ভারত নিশ্চিত ভাবে তার বিমান সক্ষমতার ৪০% সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে। আর পাকিস্তানের দূর্বল আকাশ প্রতিরক্ষা দিয়ে ভারতের বড় ধরণের বিমান আক্রমন প্রতিহত করা খুবই কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
তবে পাকিস্তানের আকাশ সক্ষমতার ৮০% ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও পাকিস্তানের মিডিয়াম ও লাইট রেঞ্জের কিছুটা পুরনো এয়ার স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি নিয়ে ভারতে গভীরে সরাসরি আক্রমন পরিচালনা করাটা বেশ কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে। আবার পাকিস্তানের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সক্ষমতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। পাকিস্তান চীন থেকে ৩/৪ রেজিমেন্ট এইচকিউ-৯/এইচকিউ-১৬এ সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কেনার কথা থাকলেও তা এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান সংগ্রহ করতে পেরেছে কি না তা নিশ্চিত করা যায় নি। এছাড়া ভারত পাকিস্তানের সীমান্ত বরাবর প্রায় ৪ রেজিমেন্ট এস-৩০০ সাফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স মোতায়েন থাকায় এবং পাশাপাশি সুপার সনিক গতির অজানা সংখ্যক বারমোস ক্রুজ মিসাইল ও নিজস্ব উতপাদিত শক্তিশালী এএডি/পিএডি (আশ্বিন) এয়ার ডিফেন্স ইনিস্টল করায় ভারত নিশ্চিত ভাবে পাকিস্তানের বড় ধরণের বিমান আক্রমন প্রতিহত করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে ভারত ইতোমধ্যেই রাশিয়া থেকে ৬.২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৫ রেজিমেন্ট এডভান্স এস-৪০০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে যা আগামী ২০১৮ সালের মধ্য রাশিয়া ভারত কে সরবরাহ করবে।
এদিকে পাকিস্তান যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতের আক্রমন প্রতিহত করতে তাদের নিজস্ব ট্যাকটিক্যাল ৬০ কিলোমিটার পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্রসহ ১৫০০-২৭৫০ কিলোমিটার পাল্লার শাহীন-২ ও শাহীন-৩ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করতে পারে। আর এক্ষেত্রে ভারত ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র হামলার ৮০% যথাযথভাবে প্রতিহত করার পর্যাপ্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হলেও ভয়াবহ রেডিয়েশন থেকে নিজেকে রক্ষা করাটা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে পরবর্তীতে ভারতের আনবিক আক্রমন থেকে পাকিস্তান নিশ্চিতভাবেই নিজেকে কোন ভাবেই রক্ষা করতে পারবে না এবং এমন কি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন আন্তজার্তিক সামরিক বিশ্লেষকেরা।
সিরাজুর রহমান, সহকারি শিক্ষক, জয়কুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

ভারত ও চীনের সীমান্ত উত্তেজনা...

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?