দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে পারমানবিক যুদ্ধের ঝুকিসহ ভয়াবহ প্রচলিত যুদ্ধের সম্ভাবনার বিষয়টি বেশ প্রকট হয়ে উঠছে। এছাড়া বর্তমানে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে অধিকাংশ দেশগুলোর মধ্যে নিরবে নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যুদ্ধ প্রস্তুতির ভয়ঙ্কর প্রবনতা নিশ্চিতভাবেই ভবিষ্যতে যে কোন সময় ভয়াবহ সামরিক সঽঘর্ষের সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করে তুলছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১২ সালেই এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে তার সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি ও জোরালো পর্যবেক্ষণ তৎপরতা শুরু করার বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, তাওয়াইওয়ান, জাপান, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ সর্বপরি অস্ট্রেলিয়ার সাথে ঘনিষ্টভাবে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং অঽশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশগুলোতে নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহসহ দেশগুলোর সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মুলত অতি সাম্প্রতিক সময়ে চীনের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও গবেষণায় বিপুল পরিমাণ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে যাচ্ছে এবং এর ধারাবাহিকতায় চীন ২০১৫ সালের জন্য ১৪৮.৬৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক বাজেট বরাদ্দ করে এবং তা পরবর্তী ২০১৬ সালে নিশ্চিতভাবে ১৬২.০০ বিলিয়ন ডলারে পৌছে যেতে পারে যা বিশ্বে সর্বোচ্চ ২য় বৃহত্তম সামরিক ব্যয় যেখানে বিশ্বের প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ৬১০.০০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া জাপান ২০১৫ সালে সামগ্রিকভাবে তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাজেট ৪২.০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করলেও জাপানের আবে সরকার সামরিক বাজেট ২০১৬ সালের জন্য ৮০.০০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অধিকাংশ রাষ্ট্র মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন্স, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান এছাড়া এমনকি মায়ানমারের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশও লাগামহীনভাবে সামরিক খাতে উন্নয়ন ও উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র সংগ্রহে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মুলত দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাকেই নিজেদের বলে জোরালো দাবি করে আসছে বেইজিং সরকার। তবে ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ আঞ্চলিক কয়েকটি দেশও সাগরটির কিছু অংশের দাবি করে আসছে। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে উপকূলবর্তী দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এমনকি দক্ষিণ চীন সাগরের জনসন সাউথ শৈলশিরা নিয়ে ১৯৮৮ সালে চীনা ও ভিয়েতনামি নৌবাহিনীর মধ্যে লড়াইও হয়েছে। চীন আবার তাওয়াইওয়ান কে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না এবং জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথেও বেশকিছু দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চরম বিরোধ ও উত্তেজনা চলছে যা নিশ্চিতভাবেই বিপজ্জনক বলেই মনে হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষীন চীন সাগর কে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ও পেশিশক্তি প্রদর্শন এক রকম চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরে আন্তর্জাতিক জল সীমায় চিনের জেট ফাইটার কর্তৃক মার্কিন গোয়েন্দা বিমানের গতিরোধ এবং মার্কিন নৌবহরের উপর ক্রমাগত নজরদারী অব্যাহত রাখায় যে কোন মুর্হূতে সামরিক সংঘর্ষের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশাঙ্খা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক সামরিক বিশেষজ্ঞরা। আবার চিন তার সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে তাদের অত্যন্ত শক্তিশালী ক্যারিয়ার কিলারখ্যাত দূর পাল্লার ডিএফ-২১ডি ও ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে যা নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যতে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েনকৃত সুপার এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার, ডেস্ট্রয়ারসহ যুদ্ধজাহাজগুলো মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে থেকেই যাচ্ছে এবং পাশাপাশি পিএলএ নেভাল ইউনিট মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোকাবেলা ও ধ্বংস করার জন্য ইতিমধ্যেই তাদের এট্যাক সাবমেরিনে অত্যন্ত গোপনে সুপারসনিক গতির ওয়াইজে-১৮ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। আসলে সাবমেরিন থেকে কার্যকর আক্রমণ পরিচালনার জন্য দক্ষিণ চীন সাগরে অত্যাধুনিক ওয়াইজে-১৮ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও যে কোন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমন প্রতিহত করার মতো যথেষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মার্কিন রণতরীতে রয়েছে। কিন্তু, চীনের এই নতুন সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শেষ মুহূর্তে গতিবেগ এমন তীব্র করে নেয় যে, রেডারের পক্ষেও তার অবস্থান নির্ণয় প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গেল দক্ষিণ চীন সাগরের সামরিক উত্তেজনা। তবে এটাও ঠিক যে কোন যুদ্ধকলীন পরিস্থিতিতে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার বোম্বার ও ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমণ কতটা সফল্ভাবে প্রতিহত করতে পারবে বা চীন একসাথে আট থেকে দশটি রনাঙ্গনে দক্ষতার সাথে সত্যিকার অর্থে যুদ্ধ করতে সক্ষম কিনা তা নিয়ে কিন্তু সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এছাড়া উত্তর কোরিয়া কর্তৃক লাগামহীন পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যুদ্ধের হুমকির প্রেক্ষিতে অত্র অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি মারাত্বক অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়। এদিকে এক মার্কিন জেনারেলের তথ্যমতে, জাপান যে কোন মুহূর্তে স্বল্প সময়ের মধ্যে শতাধিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম। যা নিশ্চিতভাবে উত্তর কোরিয়া এবং সর্বোপরি চীনের জন্য একটি বড় ধরণের সতর্ক বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। আর সত্যিই যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় জাপান ভবিষ্যতে পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তা নিশ্চিতভাবেই চীনের জন্য মারাত্বক বিপদজনক হিসেবে দেখা দিতে পারে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

ভারত ও চীনের সীমান্ত উত্তেজনা...

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?