আসন্ন দুবাই এয়ার শো ২০২৫ এ সি-৯১৯ যাত্রীবাহী বিমান প্রদর্শন করতে যাচ্ছে চীন!
চলতি ২০২৫ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৃহত্তম নগরী দুবাইতে ৫ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক দুবাই এয়ার শো ২০২৫। আসন্ন এই এয়ার শোতে এবার চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি মিডিয়াম রেঞ্জের সি-৯১৯ প্যাসেঞ্জার এয়ারক্রাফট প্রদর্শন করবে কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (সিএসিসি)।
আসলে দুবাই এয়ার শো ২০২৫ তে চীনের সি-৯১৯ এয়ারক্রাফটসহ COMAC এর তৈরি মোট তিনটি বিমান একটি দল হিসেবে তার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিশ্বের সামনে প্রদর্শন করবে। চীন প্রত্যাশা করে অদুর ভবিষ্যতে আমেরিকার বোয়িং এবং ইউরোপের এয়ারবাসের সাথে প্রতিযোগিতা করে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের যোগ্য স্থান করে নিতে পারবে।
এই প্যাসেঞ্জার এয়ারক্রাফট চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (সিএসিসি) ডিজাইন ও তৈরি করে। তবে এখনো পর্যন্ত এই বিমানের আনুমানিক ৬৫% যন্ত্রাংশ যেমন- ইঞ্জিন, এভিয়নিক্স সিস্টেম এবং ককপিটের অধিকাংশ প্রযুক্তি আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে সংযোজন করা হয়।
আর অন্য দেশের উপর এই বিমানটির প্রযুক্তিগত নির্ভরতার বিষয়টি বিবেচনা করলে কিন্তু চীনের এখানে নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি বলতে আসলে তেমন কিছুই থাকে না। তবে চীন কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং এ নিজ দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার কমপক্ষে ৬০-৭০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করার মহা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও এয়ারবাস ও বোয়িং এর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতার আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জনে কমপক্ষে এক দশক পর্যন্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে।
সি-৯১৯ যাত্রীবাহী বিমান তৈরির প্রজেক্ট গত ২০০৭ সালে শুরু করলেও চলতি ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র প্রায় ১২-১৪টি বিমান তৈরি করেছে কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (সিএসিসি)। তবে চলতি ২০২৫ সাল থেকেই এর ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন চালু করে দেশটি। আন্তর্জাতিক রুটে আমেরিকা ও ইউরোপের অনুমোদন খুব সহজে না পেলেও দেশটি তার অভ্যন্তরীণ রুটে হয়ত বড় ধরনের বাজার দখল করতে পারে।
এই বিমানের দৈর্ঘ্য ৩৮.৯ মিটার এবং উইংস স্প্যান ৩৩.৬ মিটার। এর স্ট্যান্ডার্ড পে-লোড ক্যাপাসিটি ১৫ টন এবং অপারেশনাল রেঞ্জ ৫,৫৭৬ কিলোমিটার। এই বিমানে শক্তি উৎপাদন এবং তার পাশাপাশি আকাশে নিরাপদে ছুটে চলার জন্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের যৌথভাবে তৈরি ২টি সিএফএম ইন্টারন্যাশনাল এলইএপি-১সি সিরিজের শক্তিশালী টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
এটিকে আকাশে কমপক্ষে ১২,১০০ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করার উপযোগী করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে। এই পরিবহণ বিমানের ম্যাক্সিমাম সিট ক্যাপাসিটি ১৬৪টি। যার মধ্যে ৮টি বিজনেস ক্লাস এবং ১৫৬টি ইকনোমি ক্লাস আসন অনুযায়ী সজ্জিত করা হয়েছে। তাছাড়া চীন প্রতিনিয়ত এই বিমানের আধুনিকায়নের কাজ চলমান রেখেছে।
চীন গত ২০২৪ সালের প্রথম দিকে সি-৯১৯ বিমানের আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইএএসএ) সার্টিফিকেশন পেতে আবেদন করে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচলের অনুমতি পেতে হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইএএসএ) সার্টিফিকেশন আবশ্যিকভাবে সংগ্রহ করতে হয়।
আর এই গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেশনের প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কেবল এয়ারবাস এবং বোয়িং কর্পোরেশন সাথে পাল্লা দিয়ে আন্তর্জাতিক সকল রুটে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ পাবে চীনের তৈরি প্রথম কোন যাত্রী পরিবহণ বিমান। যদিও চীন ইতোমধ্যেই তার দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে সি-৯১৯ যাত্রীবাহী বিমান পরিষেবা গত ২০২৩ সাল থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, সিনহুয়া নিউজ, গ্লোবাল টাইমস ও সিএমজি বাংলা।
লেখক পরিচিতি :
সিরাজুর রহমান,
শিক্ষক ও লেখক,
সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।
sherazbd@gmail.com

Comments
Post a Comment