চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ!

ইয়াহু ফাইন্যান্স ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২৪ সালে গ্লোবাল শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ এর বাজারের আকার ছিল প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। যা চলতি ২০২৫ সাল শেষে এই শিল্পের বাজারের আকার প্রায় ৯.১ বিলিয়ন ডলার হতে পারে এবং তা থেকে বেড়ে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা পূর্বাভাসের সময়কালে ৭.৪% সিএজিআর প্রদর্শন করবে।

জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা (আঙ্কটাড) এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রথম স্থানে রয়েছে। তাছাড়া সারা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি পুরনো জাহাজ বাংলাদেশেই ভাঙ্গা বা রিসাইকল করা হয়ে থাকে। এই শিল্পে বর্তমানে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে মোট প্রায় ৫০ হাজারের অধিক কর্মী কাজ করছেন। তাছাড়া এই শিল্পের সাথে পরোক্ষভাবে আনুমানিক আরো কয়েক লক্ষ লোক নিয়োজিত রয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশসহ ভারত, চীন, পাকিস্তান এবং তুরস্ক মিলে এই পাঁচটি দেশ বর্তমানে বৈশ্বিক জাহাজ ভাঙ্গা ও শীপ রিসাইকেলিং শিল্পের প্রায় ৭৫% দখল করে রয়েছে। গত ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী সারস বিশ্বের মোট জাহাজ ভাঙা শিল্পের ৫২.৪% বা ৮.০২ মিলিয়ন টন ওজনের পুরনো জাহাজ বাংলাদেশেই ভাঙ্গা বা রিসাইক্লিং করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে শীপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইকল ইন্ডাস্ট্রিজ অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেলেও এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কিন্তু খুবই উজ্জ্বল। তবে গত ২০২৪ সালে পরিত্যক্ত জাহাজ আমদানি বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। বিশেষ করে ডলারের কারণে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে ব্যাপক সমস্যা থাকায় ও চলমান ডলার সংকটে মুখে আমাদের শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ অনেকটাই হোঁচট খায়।

এদিকে এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত জাহাজ ভাঙার তালিকায় বলা হয়েছে যে, গত ২০২৪ সালে ১৩০টি পুরোনো ও পরিত্যক্ত জাহাজ ভাঙার জন্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ২৩% কম। যদিও বাংলাদেশ শিপ ব্রেকারর্স অ্যান্ড রিসাইক্লারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮ সালে ১৯৬টি, ২০১৯ সালে ২৩৬টি, ২০২০ সালে ১৪৪টি এবং ২০২১ সালে ২৫৮টি, ২০২২ সালে ১৫১টি জাহাজ আমদানি করে ভাঙ্গা ও রিসাইকল করা হয়। তবে সামগ্রিকভাবে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট প্রায় ৯,৭৫,০৯৫ টন ওজনের ১৬৫টি জাহাজ আমদানি করে।

জাহাজ ভাঙ্গা বা রিসাইকল শিল্পকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর সমুদ্র সৌকতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় আকারের মিলিয়ে মোট প্রায় ১৫০টি শিপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ। যদিও বর্তমানে মাত্র ৩০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড সচল রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাতটি প্রতিষ্ঠান জাহাজ ভাঙার 'পরিবেশবান্ধব' ইয়ার্ড হিসেবে ছাড়পত্র পেয়েছে এবং আরও প্রায় ১৫টি 'পরিবেশবান্ধব' সনদ পাওয়ার কাজ চলমান রয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, আমাদের দেশে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প মানে এখন আর শুধু নির্মাণ শিল্প নয়। বরং ভালো মানের ফার্নিচার, স্টিল মিল, ইলেট্রিক ক্যাবল, তামা, অ্যালমুনিয়াম, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রিক মোটর, জেনারেটরসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানার কাঁচামালের চাহিদা পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প বা শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম, ইয়াহু ফাইন্যান্স, দ্যা ডেইলি স্টার

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ছাপানো পবিত্র কুরআন মাজীদ!

ইএল ক্যাপ্টেন' এক অবিশ্বাস্য দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার!

ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তায় মোবাইল নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের বিপ্লব!