সাগরের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার!
বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট ১৪টি দেশ সক্রিয়ভাবে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা বিমানবাহী রণতরি অপারেট করে। তবে বাস্তবে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স,রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, এবং ভারতের নৌবাহিনীর হাতে থাকা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলোকে পূর্ণাঙ্গ ফিক্সড-উইং কমব্যাট এয়ারক্রাফট পরিচালনা করার উপযোগী করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে।
এই ৬টি দেশ ব্যতীত অন্যদেশগুলো যেমন তুরস্ক, জাপান, স্পেন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড এবং মিশরের মতো দেশ অনেকটা ছোট আকারের এবং কম সক্ষমতার লাইট/হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার কিংবা অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ অপারেট করে। যদিও অবশ্য এই জাতীয় লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে হেলিকপ্টারের পাশাপাশি আমেরিকার তৈরি এফ-৩৫বি সিরিজের অ্যাডভান্স শর্ট টেকঅফ অ্যান্ড ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং (STOVL/VTOL) যুদ্ধবিমান পরিচালনা করা সম্ভব।
আসলে নেভাল পাওয়ারের সংখ্যার দিক দিয়ে চীন বর্তমানে শীর্ষ স্থানে উঠে আসলেও বাস্তবে শক্তিশালী নেভাল ফ্লিট এবং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সক্ষমতার বিবেচনায় মহাসাগরের বুকে এখনো পর্যন্ত রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো। ইউএস নেভির হাতে এখনো পর্যন্ত মোট ১১টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড নিমিৎজ-ক্লাস ও এক লক্ষ টনের অধিক ওজনের ১টি ফোর্ড-ক্লাস জোরাল্ড আর ফোর্ড সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার (CATOBAR সিস্টেম) অপারেশনাল রয়েছে।
আবার এই ১২টি সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আরো ৯টি লাইট/হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার কিংবা অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ রয়েছে আমেরিকার নৌবাহিনীতে। এর পাশাপাশি সাগরের বুকে বিশেষ/গোপন সামরিক মিশন পরিচালনা করার জন্য কমপক্ষে ২টি উচ্চ প্রযুক্তির অ্যাম্ফিবিয়াস কমান্ড শিপ অপারেট করে দেশটি। তাছাড়া একক কোন সামরিক সংস্থা হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানীয় বিমান বহর অপারেটর হিসেবে বর্তমানে ইউএস নেভির হাতে আনুমানিক ৩,৭৭০টি বা তার কাছাকাছি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য এয়ারক্রাফট রয়েছে।
এদিকে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ব্যবহারের দিক দিয়ে এক আমেরিকার পর চীনের নাম আসলেও দেশটির নৌবাহিনীর হাতে ৩টি (ফুজিয়ান সি ট্রায়াল) কনভেনশনা পাওয়ার বা প্রচলিত জ্বালানি নির্ভর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে । তবে মনে করা হয়, চীন আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি প্রথম কোন নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার সার্ভিসে আনতে পারে।
তবে পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হিসেবে এক আমেরিকার পর একমাত্র ব্যবহারকারী দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। বর্তমানে ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে ১টি চার্লস দ্য গল নামক (CATOBAR) নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার অপারেশনাল রয়েছে। তাছাড়া দেশটি আগামী ২০৩৮ সালের মধ্যে নতুন একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার সার্ভিসে আনতে চায়।
তাছাড়া বর্তমানে ভারত ২টি এবং যুক্তরাজ্য ২টি (কুইন এলিজাবেথ-ক্লাস) এবং রাশিয়ার নৌবাহিনীতে ১টি (অ্যাডমিরাল কুজনেটসভ) পুরনো কনভেনশনাল পাওয়ারড ফিক্সড উইংস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার অপারেশনাল রয়েছে। তবে রাশিয়ার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারটি কয়েক বছর আগে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রয়েছে। যা অনেকটাই আউট অব সার্ভিস বলা চলে। তবে ভারতের আইএনএস বিক্রান্ত (৪৫,০০০ টন) হচ্ছে দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার।
এই দেশগুলোর পাশাপাশি ইতালি ২টি ক্যাভুর (STOVL) এবং জিউসেপ্পে গ্যারিবাল্ডি (হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার) অপারেট করে। জাপান ২টি আইজুমো ও কাগা লাইট ক্যারিয়ার অপারেট করে। যাকে জাপান এফ-৩৫বি সিরিজের (STOVL) যুদ্ধবিমান ব্যবহারের উপযোগী করে মডিফাইড করেছে। এর পাশাপাশি স্পেনের নৌবাহিনীতে ১টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২টি, অস্ট্রেলিয়ার ২টি, থাইল্যান্ডের ১টি, মিশরের ২টি এবং তুরস্কের নৌবাহিনীতে ১টি নিজস্ব প্রযুক্তির লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার/হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার বা অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ অপারেশনাল রয়েছে।
তবে তুরস্কের টিসিজি আনাদুলু (এল-৪০০) লাইট ক্যারিয়ারকে এফ-৩৫বি সিরিজের যুদ্ধবিমান পরিচালনা করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমানের পরিবর্তে তুরস্ক কিঝিলএলমা এবং বায়রাক্তার টিবি-৩ কমব্যাট ড্রোন এ ব্যবহার করছে। ঠিক এই কারণেই বর্তমানে এটিকে বলা হচ্ছে বিশ্বের প্রথম কোন সুপার ড্রোন ক্যারিয়ার।
তথ্যসূত্র :- জেনস ডিফেন্স, উইকিপিডিয়া, নেভাল টেকনোলজি।
Sherazur Rahman
Comments
Post a Comment