বন্ধ হোক ভারত-পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনা ও ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতিঃ


ভাররের কাশ্মীরে পুলওয়ামারে বিপুল সংখ্যক সেনা হত্যা এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম মাত্রায় সামরিক সংঘর্ষ এবং সীমান্ত উত্তেজনা বিরাজ করায়কে সাম্প্রতিক সময়ে আবারো সমগ্র ভারতীয় উপমহাদশ এক রকম দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধের ঝুঁকীর মুখে পড়তে যাচ্ছে। মুলত পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ সামরিক সংঘর্ষ সারা এ মুহুর্তে সারা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হলেও বিশ্বের বেশ কিছু দেশ এটাকে তাদের জন্য বড় ধরণের অস্ত্র ব্যবসার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে। বিশেষ করে বিশ্বের প্রধান সামরিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন ভারতীয় উপমহাদেশে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলামান যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও কিম্বা লাইন অব কন্ট্রলে শান্তির কথা বার বার মুখে বললেও বাস্তবে দেশগুলো কিন্তু বেজায় খুশিই বলা চলে। তারা ভারত পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত গোপনে যে যার মতো করে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বানিজ্য চালিয়ে যেতে এক রকম বদ্ধপরিকর বলে মনে করা হয়। আর এতে কিন্তু কোন ধরণের সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। আর এ সামরিক উত্তেজনা বা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত বা পাকিস্তান কে জিতবে তা বলা সম্ভব না হলেও, সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ এক ভয়ঙ্কর প্রচলিত কিম্বা পারমাণবিক যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে যাচ্ছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন এখন কিন্তু অনেকটাই প্রকাশ্যেই ভারতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং অত্যন্ত সুকৌশলেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানির বা সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাছারা বৈশ্বিক অস্ত্র বানিজ্যের প্রায় ১২% পর্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরাসরি ভারতে চলে যাচ্ছে এবং ভারতের মোদি সরকার ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আনুমানিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় এবং আমদানির চুক্তি সম্পন্ন করেছে। যার বেশির ভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, রাশিয়া এবং ফ্রান্সের সাথে করা অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি। যা কিনা পর্যায়ক্রমে আগামী ২০২০-২২ সময়ের মধ্যে সরবরাহ পেতে পারে। স্টকহোম ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পীস রিসার্চ ইনিস্টিটিউট এর প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০০৮-১২ সময়ের তুলনায় ২০১৩-১৭ অর্থ বছরে ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বা রপ্তানি ৫৫৭% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বর্তমানে মধ্যপ্রচ্যের ছোট্ট দেশ ইসরাইল হতে যাচ্ছে ভারতে উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর অস্ত্র সরবরাহের অন্যতম ক্ষেত্র এবং এ দেশটিও কিন্তু ভারতে প্রতি বছর আনুমানিক ২.০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে।
এদিকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পাকিস্তান অত্যাধুনিক অস্ত্র আমদানিতে ভারত অপেক্ষা যথেষ্ঠ পিছিয়ে পড়লেও তাদের নিজস্ব সামর্থ ও সক্ষমতা অনুযায়ী এহেন কাজে চেষ্টার কোন ঘাটতি রাখছে না। কার্যত চীন আবার ভারতকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে উস্কিয়ে দিচ্ছে যুদ্ধের জন্য। পাকিস্তানের পরীক্ষিত ও দীর্ঘ দিনের বন্ধু চীন কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তানের অস্ত্র সরবরাহের অন্যতম উৎস হিসেবে অবির্ভূত হয়েছে। যেখানে চীন সামরিক সহযোগীতার অংশ হিসেবে পাকিস্তানকে বিপূল পরিমাণ অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে অনেকটা স্বল্প মূল্যে কিম্বা দীর্ঘ মেয়াদী জটিল ঋণের আওতায় পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করতে কোন রকম দ্বিধা করছে না। চীন মুলত পাকিস্তানে কি পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানি করে যাচ্ছে এ নিয়ে পরিষ্কার কোন তথ্য উপাত্ত পাওয়া সম্ভব না হলেও মনে করা হয় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ১২.০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জান সরবরাহ করে। যার ৬০% পর্যন্ত কি না দীর্ঘ মেয়দী জটিল ঋনের আওতায় করা সামরিক সরবরাহ চুক্তি। আবার পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ বা শোচনীয় হলেও ভারতকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তারা কিন্তু সামরিক সাজ সরঞ্জান ক্রয় কিম্বা আমদানিতে ঋন করে হলেও উঠে পড়ে লেগেছে। যা কি না পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক দৈন্যদশা ও চরম আর্থিক সংকটের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার ইস্যুতে বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার রাশিয়ার ভূমিকা কিন্তু বেশ বিতর্কিত এবং অনেকটাই অস্পষ্ট বলা চলে। এখনো পর্যন্ত ভারতের অস্ত্র সরবরাহের অন্যতম ক্ষেত্র রাশিয়া হলেও বর্তমান সময়ে পুতিন সরকার ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাস্তবে কার পক্ষে বা বিপক্ষে তা কিন্তু বলা বেশ কঠিন। বরং ভারত ও পাকিস্তান ইস্যুতে ক্রেমিলিন সরকার এক রকম কৌশলগত ডবল গেম খেলে যাচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়। রাশিয়া এখনো পর্যন্ত বিপূল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম ভারতে রপ্তানি কিম্বা সরবরাহ করে গেলেও পাশাপাশি পাকিস্তানের সাথে সামরিক সম্পর্ক উচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি করতে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। বর্তমান সময়ে পাকিস্তানের সাথে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের চরম মাত্রায় খারাপ ও শীতল সম্পর্ক বজায় থাকায় সুযোগ সন্ধানী রাশিয়া কৌশলগত কারণে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি অস্ত্র রপ্তানির সকল নিষেধাজ্ঞা ও বাধা তুলে নিয়েছে এবং পাকিস্তানের চাহিদা মাফিক সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি ও সরবরাহে ভারতের প্রবল আপত্তি ও বাধাকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তবে যাই হোক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক সম্পর্ক এবং সহযোগীতাকে রাশিয়া ভালো ভাবে নিচ্ছে না এটা কিন্তু এক রকম নিশ্চিত। আর অন্যদিকে মার্কিন ও পাকিস্তানের দুর্বল সম্পর্ক ও বিবাদকে কাজে লাগিয়ে নিজের অস্ত্র বাজার ও বানিজ্য বিস্তারের মাধম্যে এবং অনেকটাই সুকৌশলেই আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে সরাসরি প্রবেশের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আর এ নীতি বাস্তবায়নে চীন ও রাশিয়ার দৃষ্টভঙ্গির মধ্যে আদৌ কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। যা কিনা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উচ্চ মাত্রায় অন্তরায় বা প্রবল বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আমাদের সকলকে বৈশ্বিক উস্কানি উপেক্ষা করে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, এই নীতির আলোকে এবং অত্যন্ত দ্বায়িত্বশীলতার সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় নিজস্ব মতামত তুলে ধরা উচিত বলে আমি মনে করি।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, ছোট চৌগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংরা নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

   

Comments

Popular posts from this blog

ইএল ক্যাপ্টেন' এক অবিশ্বাস্য দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার!

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

Brain-Computer Interface (BCI) technology: