মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় পরিস্থিতির আরালে সৌদি আরব ও ইরান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ান শিবিরে বিভক্ত হয়ে বিপদজনক ভাবে প্রভাব বিস্তার এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জরিয়ে পরার মতো জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছারা মধ্যপ্রাচ্যের আরেক শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে সাম্প্রতিকতম কালে সৌদি আরবের গোপন সামরিক ও সহযোগিতামুলক সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যত আরো সংঘাতময় ও বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। আবার উদীয়মান আঞ্চলিক সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ ইরান ও তুরস্ক ইদানিং কালে নজিরবিহীন ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক স্পর্শকাতর রাজনৈতিক ইস্যুতে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে, যা মধ্যপ্রাচের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে। তাছারা ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে ইরান ও সৌদি মত বিরোধ ও দ্বন্দ চরম আকার ধারণ করেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধে যে রুপ নিবে না তা স্পষ্ট করে বলা যাবে না।
আসলে মধ্য়প্রাচ্যে চলমান বিরামহীন রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীল যুদ্ধ পরিস্থিতির আড়ালে বিশ্বের দুই সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের প্রভাব বিস্তার ও নিজস্ব প্রাধান্য বজায় রাখতে অতি ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তাছারা বৈশ্বিক অস্ত্র বানিজ্যের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যকে বিবেচনা করে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরান, মিশর, ইরান, ইরাক, সিরিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে শত বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম রপ্তানি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয়ান দেশগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে ভয়ানক প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে। আর এক্ষেত্রে মুল শিকার কিন্তু মুসলিম বিশ্বের ধনী দেশগুলো এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা শাসিত আরব দেশগুলোকে বাধ্য করা হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অস্ত্র কিনতে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।
রাশিয়া তার বন্ধু রাষ্ট্র সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতা ও আইএস দমনের আংশ হিসেবে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে লাগামহীনভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছে। আর সিরিয় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী সরাসরি ১৬৬ ধরণের সম্পূর্ণ নতুন উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র ও সাজ সরঞ্জামের গবেষণা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং এর মধ্যে ১৫২ প্রকারের অস্ত্র পরীক্ষা ও উন্নয়ণের ক্ষেত্র উচ্চ মাত্রায় সফল হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আবার বিশেষ করে হাজার মাইল দূরে রাশিয়ার মুল ভূখন্ডে অবস্থিত গোপন সামরিক ঘাঁটি থেকে রাশিয়ান টুপোলেভটিইউ-৯৫ ও টিইউ-২২এম৩ লং রেঞ্জ বোম্বার ব্যবহার করে ইরান ও ইরাকের আকাশ পথ দিয়ে সরাসরি একাধিক আইএস অবস্থানে ব্যাপক হামলা পরিচালনা করে পুনরায় নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসার সক্ষমতাকে রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতির এক বিশাল অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া ব্লাক সী ও মেডিটরিয়ান সী এ অবস্থানরত রাশিয়ান সাবমেরিন থেকে শতাধিক ক্যালিবার ক্রুজ মিসাইল সরাসরি সিরিয়ার একাধিক আইএস সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নিক্ষেপের মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসরদের গভীর চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। রাশিয়া আবার মার্কিন জোটের যুদ্ধবিমানকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করার জন্য সিরিয়ায় একাধিক গোপন ঘাঁটিতে শক্তিশালী সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ মোতায়েন করে রেখেছে। রাশিয়া আবার ৫৪টি জেট ফাইটার সিরিয়ায় মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে তাদের অত্যাধুনিক এসইউ-৩০ এবং এসইউ-৩৪ ফুলবার্ক মিডিয়াম রেঞ্জ বোম্বার ও এট্যাক জেট ফাইটার অন্যতম।
এবার আসি আসল কথায়। রাশিয়া তার মিত্রদেশ সিরিয়ার বাসার আল আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আকস্মিক সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পরার মুল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতা করা বা সন্ত্রাস দমন করা ছিল না। মুলত রাশিয়ান পুতিন সরকার সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতার আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে নিজ কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব উতপাদিত প্রাণঘাতী অস্ত্র ও সাজ সরঞ্জাম বিশ্ব সমাজের কাছে প্রদর্শন এবং বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল অস্ত্র বানিজ্যের নিজ অংশীদ্বারিত্ব এবং স্বার্থ আদায় করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমি বলব রাশিয়ার পুতিন সরকারের কূট কৌশল ও সমরনীতি এক রকম সফল বলা চলে। রাশিয়া ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশের সাথে অস্ত্র বানিজ্য চুক্তি সম্পর্ন করতে সক্ষম হয়েছে। যার মধ্যে তুরস্কের সাথে ২.৫০ বিলিয়ন ডলার মুল্যে এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম রপ্তানি চুক্তি এবং মিশরে বিপুল পরিমান এমআই-২৮ এট্যাক হেলিকপ্টার ও ২৪টি মিগ-৩৫ বিক্রির মতো আলোচনার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক নয়া মেরুকরণের ঝড়ের কবলে সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করে কিছুদিন আগে রাশিয়ান এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা যায়। আর এতে করে রাশিয়া অদূর ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার ও অস্ত্র বানিজ্যে ব্যাপকভাবে লাভোবান হতে যাচ্ছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু মোটেও বসে নেই। বিগত পাঁচ বছরে মার্কিন সামরিক বাহিনী সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের নামে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক যুদ্ধক্ষেত্রে এ পর্যন্ত ১৪৮ টি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র, স্টিলথ জেট ফাইটার ও সাজ সরঞ্জামের অসংখ্য পরী ক্ষা সম্পন্ন করে। যার মধ্যে উচ্চ স্টিলথ প্রযুক্তির এফ-২২ রেপটার এবং এফ-৩৫ লাইটনিং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া মোয়াবের মতো অতি ধ্বংসাত্বক অপারমাণবিক বোমার সফল প্রয়োগ বিশ্ববাসীর নজরে তুলে ধরার বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ বলা চলে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গমণের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত কৌশলগত। এ সফরের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সাথে ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের বানিজ্য চুক্তি করে। যার মধ্যে ১১০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি ছিল মিডিয়ায় আলোচনার মূখ্য বিষয়। তাছাড়া কাতারে সীথে ১২.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৩৬টি এফ-১৫ এট্যাক জেট ফাইটার সরবরাহের চুক্তিটিও কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব বহণ করে।
যাই হোক আমি পরিশেষে বলতে চাই, বিশ্বের সামরিক পরাশক্তিধর দেশগুলো এ মুহুর্তে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে তাদের অস্ত্র পরীক্ষার অন্যতম ক্ষেত্র বানিয়ে বছরের পর বছর অস্থিতিশীল যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অতি লাভজনক মাল্টি বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে হাজার হাজার নিরীহ সাধারণ মানুষের মৃত্যু কিন্তু তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না এবং এতে তাদের কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। আসলে মুসলিম বিশ্বের দূর্বল পররাষ্ট্র নীতি, অদক্ষতা, প্রযুক্তিগত অনগ্রসরতা এবং অনৈক্যের মতো হতাশাজনক পরিস্থিতি আজ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে অতিমাত্রায় অনিরাপদ এবং অন্যের নগ্ন হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
-------- ধন্যবাদ সকলকে
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, জয়কুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
আসলে মধ্য়প্রাচ্যে চলমান বিরামহীন রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীল যুদ্ধ পরিস্থিতির আড়ালে বিশ্বের দুই সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের প্রভাব বিস্তার ও নিজস্ব প্রাধান্য বজায় রাখতে অতি ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তাছারা বৈশ্বিক অস্ত্র বানিজ্যের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যকে বিবেচনা করে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরান, মিশর, ইরান, ইরাক, সিরিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে শত বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম রপ্তানি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয়ান দেশগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে ভয়ানক প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে। আর এক্ষেত্রে মুল শিকার কিন্তু মুসলিম বিশ্বের ধনী দেশগুলো এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা শাসিত আরব দেশগুলোকে বাধ্য করা হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অস্ত্র কিনতে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।
রাশিয়া তার বন্ধু রাষ্ট্র সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতা ও আইএস দমনের আংশ হিসেবে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে লাগামহীনভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছে। আর সিরিয় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী সরাসরি ১৬৬ ধরণের সম্পূর্ণ নতুন উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র ও সাজ সরঞ্জামের গবেষণা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং এর মধ্যে ১৫২ প্রকারের অস্ত্র পরীক্ষা ও উন্নয়ণের ক্ষেত্র উচ্চ মাত্রায় সফল হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আবার বিশেষ করে হাজার মাইল দূরে রাশিয়ার মুল ভূখন্ডে অবস্থিত গোপন সামরিক ঘাঁটি থেকে রাশিয়ান টুপোলেভটিইউ-৯৫ ও টিইউ-২২এম৩ লং রেঞ্জ বোম্বার ব্যবহার করে ইরান ও ইরাকের আকাশ পথ দিয়ে সরাসরি একাধিক আইএস অবস্থানে ব্যাপক হামলা পরিচালনা করে পুনরায় নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসার সক্ষমতাকে রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতির এক বিশাল অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া ব্লাক সী ও মেডিটরিয়ান সী এ অবস্থানরত রাশিয়ান সাবমেরিন থেকে শতাধিক ক্যালিবার ক্রুজ মিসাইল সরাসরি সিরিয়ার একাধিক আইএস সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নিক্ষেপের মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসরদের গভীর চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। রাশিয়া আবার মার্কিন জোটের যুদ্ধবিমানকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করার জন্য সিরিয়ায় একাধিক গোপন ঘাঁটিতে শক্তিশালী সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ মোতায়েন করে রেখেছে। রাশিয়া আবার ৫৪টি জেট ফাইটার সিরিয়ায় মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে তাদের অত্যাধুনিক এসইউ-৩০ এবং এসইউ-৩৪ ফুলবার্ক মিডিয়াম রেঞ্জ বোম্বার ও এট্যাক জেট ফাইটার অন্যতম।
এবার আসি আসল কথায়। রাশিয়া তার মিত্রদেশ সিরিয়ার বাসার আল আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আকস্মিক সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পরার মুল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতা করা বা সন্ত্রাস দমন করা ছিল না। মুলত রাশিয়ান পুতিন সরকার সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সামরিক সহযোগিতার আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে নিজ কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব উতপাদিত প্রাণঘাতী অস্ত্র ও সাজ সরঞ্জাম বিশ্ব সমাজের কাছে প্রদর্শন এবং বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল অস্ত্র বানিজ্যের নিজ অংশীদ্বারিত্ব এবং স্বার্থ আদায় করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমি বলব রাশিয়ার পুতিন সরকারের কূট কৌশল ও সমরনীতি এক রকম সফল বলা চলে। রাশিয়া ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশের সাথে অস্ত্র বানিজ্য চুক্তি সম্পর্ন করতে সক্ষম হয়েছে। যার মধ্যে তুরস্কের সাথে ২.৫০ বিলিয়ন ডলার মুল্যে এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম রপ্তানি চুক্তি এবং মিশরে বিপুল পরিমান এমআই-২৮ এট্যাক হেলিকপ্টার ও ২৪টি মিগ-৩৫ বিক্রির মতো আলোচনার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক নয়া মেরুকরণের ঝড়ের কবলে সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করে কিছুদিন আগে রাশিয়ান এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা যায়। আর এতে করে রাশিয়া অদূর ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার ও অস্ত্র বানিজ্যে ব্যাপকভাবে লাভোবান হতে যাচ্ছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু মোটেও বসে নেই। বিগত পাঁচ বছরে মার্কিন সামরিক বাহিনী সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের নামে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক যুদ্ধক্ষেত্রে এ পর্যন্ত ১৪৮ টি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র, স্টিলথ জেট ফাইটার ও সাজ সরঞ্জামের অসংখ্য পরী ক্ষা সম্পন্ন করে। যার মধ্যে উচ্চ স্টিলথ প্রযুক্তির এফ-২২ রেপটার এবং এফ-৩৫ লাইটনিং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া মোয়াবের মতো অতি ধ্বংসাত্বক অপারমাণবিক বোমার সফল প্রয়োগ বিশ্ববাসীর নজরে তুলে ধরার বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ বলা চলে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গমণের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত কৌশলগত। এ সফরের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সাথে ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের বানিজ্য চুক্তি করে। যার মধ্যে ১১০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি ছিল মিডিয়ায় আলোচনার মূখ্য বিষয়। তাছাড়া কাতারে সীথে ১২.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৩৬টি এফ-১৫ এট্যাক জেট ফাইটার সরবরাহের চুক্তিটিও কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব বহণ করে।
যাই হোক আমি পরিশেষে বলতে চাই, বিশ্বের সামরিক পরাশক্তিধর দেশগুলো এ মুহুর্তে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে তাদের অস্ত্র পরীক্ষার অন্যতম ক্ষেত্র বানিয়ে বছরের পর বছর অস্থিতিশীল যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অতি লাভজনক মাল্টি বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে হাজার হাজার নিরীহ সাধারণ মানুষের মৃত্যু কিন্তু তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না এবং এতে তাদের কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। আসলে মুসলিম বিশ্বের দূর্বল পররাষ্ট্র নীতি, অদক্ষতা, প্রযুক্তিগত অনগ্রসরতা এবং অনৈক্যের মতো হতাশাজনক পরিস্থিতি আজ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে অতিমাত্রায় অনিরাপদ এবং অন্যের নগ্ন হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
-------- ধন্যবাদ সকলকে
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, জয়কুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
Comments
Post a Comment