সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সম্মানিত হাসিনা সরকার ডিফেন্স গোল-২০৩০ এর আলোকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে আমাদের প্রাণের প্রিয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য মিডিয়াম মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (এমএমআরসিএ) জেট ফাইটার সংগ্রহের আওতায় ২ স্কোয়াড্রন (প্রথমে ১ ও পরবর্তীতে ১ স্কোয়াড্রন) চতুর্থ প্রজন্মের রাশিয়ান মাল্টিরোল মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার ক্রয় করতে যাচ্ছে। আসলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মিগ-২৯ এর বিকল্প হিসেবে অত্যাধুনিক মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার বা সম জাতীয় ৪++ জেনারেশনের জেট ফাইটার ক্রয়ের বিষয়টি সার্বিকভাবে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবল্থা উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।

মুলত রাশিয়ান মিকোয়ান কর্পোরেশন ২০১৯ সালের শেষের দিকে মাল্টিরোল মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটারের ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন শুরু করতে যাচ্ছে। রাশিয়া কার্যত তাদের তিন দশকের ব্যাপক উৎপাদিত মিগ-২৯এম এর মেইন ফ্রেমের উপর ভিত্তি করে এর ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়ে উন্নত এইইএসএ রাডার সমৃদ্ধ নতুন প্রজন্মের সুপার ম্যানুভার মাল্টিরোল মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার সার্ভিসে আনতে এক রকম বদ্ধপরিকর বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার মিকোয়ান কর্পোরেশনের তৈরি মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটারের প্রথম প্রটোটাইপ কপির সফল উড্ডয়ন পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয় ২০০৭ সালে। তাছাড়া, রাশিয়ান মিগ কর্পোরেশন ইতোমধ্যেই একাধিক সফল পরীক্ষামুলক উড্ডয়ন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যাচাই পূর্বক এখনো পর্যন্ত ৭/৮টি প্রটোটাইপ কপি তৈরি সম্পন্ন করেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ এর প্রডাকশন লাইন শুরু করার কথা থাকলেও তা ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু করা সম্ভব হবে বলে মত প্রকাশ করেন রাশিয়ার ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের (ইউএসি) প্রধান বোরিস স্লাইয়ুসার। তবে এক দশকেও রাশিয়ার ডেডিকেচেড জেট ফাইটার  হিসেবে মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ সার্ভিসে আনতে না পারার বিষয়টি কিন্তু রাশিয়ার চরম অর্থনৈতিক সংকট ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের যথেষ্ট অবকাশ থেকে যায়।

রাশিয়ান মিকোয়ান কর্পোরেশনের তৈরি মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ হচ্ছে ৪++ জেনারেশনের এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার। যা কার্যত আগের দুই রকম মিগ-২৯ বিমানের উপর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়ে এ যুদ্ধবিমান তৈরি করা হচ্ছে। মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটারকে ভয়ঙ্কর আক্রমন এবং দীর্ঘক্ষণ উড্ডয়ন সক্ষমতা নিশ্চিত করতে দুটি শক্তিশালী আরডি-৩৩এমকেবিএস থ্রাস্ট ভেক্টরিং কন্ট্রোল সিস্টেম (টিভিসি) আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যাবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি মিগ-৩৫ কে সুখোই সিরিজের জেট ফাইটারের চেয়ে অপারেশন ও মেন্ট্যানেন্স কস্ট যথা সম্ভব কম ও অধিতকতর সহজ করার বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। মিগ-৩৫ এর প্রতি ইউনিট উৎপাদন মূল্য ৪০.০০ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হলেও আন্তজার্তিক বাজারে ৫০-৬০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রয় করা হতে পারে এবং ঘন্টা প্রতি অপারেটিং কস্ট ৭০০০-৯০০০ ডলার বা তার কাছাকাছি হতে পারে বলে মনে করা হয়।

মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ এ উন্নত একটিভ ইলেক্ট্রনিক্যাললী স্ক্যানড এ্যারি (এইএসএ) রাডার সিস্টেম ও অপটিক্যাল লোকেটিং সিস্টেম (ওএলএস) সহ ১৬০ মডিউল বিশিষ্ট 'জুক মা' এ্যান্টেনা সযোজন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে আকাশ পথে ১৬০ কিলোমিটারের মধ্যে অগত টার্গেট চিহ্নিত করার পাসাপাশি ভূমিতে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে টার্গেট রাডার লক করতে সক্ষম।

মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ এ অভ্যন্তরীন ভাবে ৯৫০ লিটার জ্বালানী ধারণ করতে পারে এবং ফিউজলেগে এক্সটা ফুয়েল ড্রপ ট্যাংকে সর্বোচ্চ ২০০০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানী বহণ করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া, এটি রি-ফুয়েলিং সুবিধা নিয়ে একাধারে ৫৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কম্ব্যাট মিশন পরিচালনা করতে পারবে। যেখানে নিজস্ব জ্বালানী ব্যাবহার করে সর্বোচ্চ ৩১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম। মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ জেট ফাইটারের সর্বোচ্চ গতি ২.২ ম্যাক ও কমব্যাট রেডিয়াস ১০০০ কিলোমিটার। এছাড়া মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ সর্বোচ্চ ১৭৫০০ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করতে সক্ষম এবং ম্যাক্সিমাম ম্যানুভারিং লোড ফ্যাক্টর ১০.০০ জি।
মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার তার ৯টি হার্ড পয়েন্টে সর্বোচ্চ ৬৫০০/৭০০০ কেজি পর্যন্ত আস্ত্র ও ক্ষেপনাস্ত্র বহণ করতে সক্ষম। তাছাড়া, এটিতে প্রাথমিক অস্ত্র হিসেবে ১৫০ রাউন্ডের একটি ৩০ এমএম জিএসএইচ-৩০-১ স্মুথবোর ক্যানন সংযুক্ত করা হয়েছে। এর প্রধান অস্ত্র হিসেবে ৮টি এয়ার টু সারফেস মিসাইল ও ২৪টি এয়ার টু এয়ার মিসাইল সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি থাকছে গাইডেড এন্ড আনইডেড বোম্ব ও গাইডেড ও লেজার গাইডেড রকেট পোড।

২০১৯ সালে প্রডাকশন লাইন শুরু হলে রাশিয়ান পুতিন সরকার  প্রাথমিক ভাবে ৩৭টি মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার তাদের নিজস্ব বিমান বাহিনীতে সংযোজন করবে এবং পরিকল্পনা মাফিক ভবিষ্যতে এরুপ ১৭০টি জেট ফাইটার রাশিয়ার বিমান বাহিনীতে অন্তভুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া আন্তজার্তিক বাজারের প্রথম ক্রেতা হিসেবে মিশর ২৪টি মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ ক্রয় করার প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে যাই হোক অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সম্মানিত সরকারের ২ স্কোয়াড্রন (প্রথমে ১ ও পরবর্তীতে ১ স্কোয়াড্রন) মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ জেট ফাইটারের ক্রয় বা সংযোজনের বিষয়টিকে আমি বিনয়ের সাথে সমর্থন ও আস্থা জ্ঞাপন করছি।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, জয়কূড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?

এবার আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে তুরস্কঃ