বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সম্পদশালী ও দরিদ্র দেশের তালিকা।



নিউইয়র্ক ভিত্তিক গ্লোবাল ফাইনান্স ম্যাগাজিন সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৬ সালের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং গরীব দেশের তালিকা প্রনয়ন করেছে। তাদের তালিকা অনুসারে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ মধ্যপ্রাচ্যের কাতার এবং সবচেয়ে দরিদ্র দেশ আফ্রিকা মহাদেশের মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। আসলে গ্লোবাল ফাইনান্স ম্যাগাজিন ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড (আইএমএফ) এর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ডাটা ব্যাংক ব্যবহার করে বিশ্বের ১৮৯ দেশের মাথাপিছু জিডিপি ও ক্রয় ক্ষমতার সমতার (পিপিপি) ভিত্তিতে তাদের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

গ্লোবাল ফাইনান্স ম্যাগাজিন ১৮৯ দেশের মধ্যে সবেচেয়ে ধনী ও সম্পদশালী দেশ হিসেবে ১ম স্থানে মধ্যপ্রাচ্যের কাতারকে নির্বাচন করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কাতারের গড় মাথাপিছুয় আয় (পিপিপি) ১,২৯,৭২৬ মার্কিন ডলার দেখানো হয়েছে। আসলে কাতার ধনী দেশ হিসেবে বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারলেও বিগত কয়েক বছর ধরে চলা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও আন্তজার্তিক বাজারে জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতনে গত এক বছরে কাতারের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৫ হাজার ডলার কমেছে। যদিও তা তালিকার দ্বিতীয় ধনী দেশ লুক্সেমবার্গের মাথাপিছু আয়ের প্রায় ২৮ হাজার ডলার বেশি। প্রতিবেদনে ২য় শীর্ষস্থানে থাকা লুক্সেমবার্গের মাথাপিছু আয় দেখানো হয়েছে ১,০১,৯৩৬ মার্কিন ডলার। ৩য় স্থানে ম্যাকাও ৯৬,১৪৭ মার্কিন ডলার, ৪র্থ স্থানে সিংগাপুর ৮৭,০৮২ মার্কিন ডলার, ৫ম স্থানে ব্রুনাই দারেসসালাম ৭৯,৭১০ মার্কিন ডলার, ৬ষ্ঠ স্থানে কুয়েত ৭১,২৬৩ মার্কিন ডলার, ৭ম স্থানে আয়ারল্যান্ড ৬৯,৩৭৪ মার্কিন ডলার, ৮ম স্থানে নরওয়ে ৬৯,২৯৬ মার্কিন ডলার, ৯ম স্থানে আরব আমিরাত ৬৭,৬৯৬ মার্কিন ডলার এবং ১০ম স্থানে স্যান মেরিনোর ৬৪,৪৪৩ মার্কিন ডলার।

আবার মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে নিম্ন আয়ের দরিদ্র দেশগুলোর দশটি আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত। নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায় ১ম স্থানে দেখানো হয়েছে  সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (১৮৯)। দেশটির মাথাপিছু আয় মাত্র ৬৫৬ মার্কিন ডলার। ২য় স্থানে ডেমোক্রটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (১৮৮) ৭৮৪ মার্কিন ডলার, ৩য় স্থানে বুরুন্ডি (১৮৭) ৮১৮ মার্কিন ডলার, ৪র্থ স্থানে লাইবেরিয়া (১৮৬) ৮৮২ মার্কিন ডলার, ৫ম স্থানে নাইজার(১৮৫) ১,১১৩ মার্কিন ডলার, ৬ষ্ঠ স্থানে মালোই (১৮৪) ১১৩৯ মার্কিন ডলার, ৭ম স্থানে মোজাম্বিক (১৮৩) ১,২২৮ মার্কিন ডলার, ৮ম স্থানে গায়েনা (১৮২) ১,২৭১ মার্কিন ডলার, ৯মস্থানে ইরিত্রিয়া (১৮১) ১,৩২১ মার্কিন ডলার এবং ১০ম স্থানে আছে মাদাগাস্কার ১,৫০৪ মার্কিন ডলার।


গ্লোবাল ফাইনান্স ম্যাগাজিন এর প্রতিবেদনের তালিকায় বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ১৪৩ তম। তালিকা অনুসারে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৩,৮৯০ মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে ৪৬ ধাপ উপরে এবং সর্বোচ্চ সম্পদশালী দেশের তালিকা থেকে ১৪২ ধাপ নিচে অবস্থান করছে। অবশ্য বাংলাদেশ নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান এই তালিকায় ধরে রেখেছে এবং বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপির আকার ২৪৮.৮৫৩ বিলিয়ন ডলারআমাদের পার্শ্ববর্তী বৃহৎ বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের অবস্থান ১২৬ তম। ভারতের মাথাপিছু আয় ৬,৬৫৮ মার্কিন ডলার হলেও কিন্তু এর জিডিপি বৃহৎ আকারের ২.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমান১২৯তম স্থানে মায়ানমার ৫,৯৫৩ মার্কিন ডলার, ১৩৭ তম স্থানে পাকিস্থান ৫,১২০ মার্কিন ডলার, ১০৪ তম স্থানে শ্রীলংঙ্কা ১১,১৮৯ মার্কিন ডলার, ১৬২ তম স্থানে নেপাল ২,৪৮০ মার্কিন ডলার, ১৬৭ তম স্থানে আফগানিস্থান ১,৯৫৭ মার্কিন ডলার।

তবে মাথাপিছু আয় কমবেশি যাই হোক না কেন গ্রোস ডমেস্টিক প্রডাক্টস (জিডিপি) এর ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে ৫টি সম্পদশালী দেশ হচ্ছে যথাক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, জাপান এবং যুক্তরাজ্য। গ্লোবাল ফাইনান্স ম্যাগাজিন এর প্রতিবেদনের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ সম্পদশালী দেশের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৩ তম এবং মাথাপিছু আয় ৫৭,২৯৩ মার্কিন ডলার হলেও জিডিপির আকার ১৯.৪২ ট্রিলিয়ন ডলার যা বিশ্বে সর্বোচ্চ জিডিপি৮১ তম স্থানে থাকা চীনের মাথাপিছু আয় ১৫,৪২৩ মার্কিন ডলার হলেও জিডিপি আকার ১১.৮০ ট্রিলিয়ন ডলার যা বিশ্বে সর্বোচ্চ ২য় জিডিপি আবার ১৯ তম স্থানে থাকা জার্মানির মাথাপিছু আয় ৪৮,১৮৯ মার্কিন ডলার হলেও জিডিপির আকার ৩.৪৩ ট্রিলিয়ন ডলার। ৩০ তম স্থানে জাপানের মাথাপিছু আয় ৩৮,৮৯৩ মার্কিন ডলার এবং জিডিপি ৪.৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২৭ তম স্থানে যুক্তরাজ্যের মাথাপিছু আয় ৪২,৫১৩ মার্কিন ডলার এবং সার্বিক জিডিপির আকার ২.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার

গ্লোবাল ফাইনান্স ম্যাগাজিন এর প্রতিবেদনের তালিকায় বিশ্বের ১৮৯টি দেশের তালিকা বিশ্লেষণ করে শীর্ষস্থানীয় ১০ সম্পদশালী দেশের মধ্যে একটি সাধারণ মিল লক্ষ্য করা যায় এবং এ সাধারণ মিলটি হলো মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্যতিত শীর্ষ নয়টি দেশই আয়তনে খুব ছোট এবং লোকসংখ্যা খুবই কম উদাহরণ হিসেবে কাতারের নাম উল্লেখ্যযোগ্য। এছাড়া ইউকিপিডিয়ার তথ্যমতে, কাতারের আয়তন মাত্র ১১৫৮৬ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ২৭ লক্ষ। কাতারের ২০১৬ সালের জিডিপি ৩৫৩. ১৪৩ বিলিয়ন ডলার। কাতারের বার্ষিক জিডিপি লোকসংখ্যা অনুপাতে অতি উচ্চ মানের হওয়ায় তাদের মাথাপিছু আয় বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার ধনী দেশ নির্বাচনের ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি দেশের নাগরিকেরা আসলেই কতটুকু সম্পদশালী সেটা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা কতটুকু তা নির্ণয় করা এবং মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেশি হলে ধরে নেওয়া হয় একটি দেশের নাগরিকেরা তাঁদের জীবন চালানোর প্রয়োজনীয় সব চাহিদা নিজেরাই পূরণ করতে সক্ষম বলে ধরে নেয়া যায়।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?

এবার আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে তুরস্কঃ