‘টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা থাড (THAAD) প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা।



টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সবা থাড (THAAD) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন করপোরেশনের তৈরি উচ্চ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি অত্যাধুনিক ও অত্যন্ত শক্তিশালী এন্ট্রি ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিভেন্স সিস্টেম বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা মুলত ৯০ এর দশকের ইরাক যুদ্ধে প্রেট্রিয়ট ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার প্রযুক্তিগত সফলতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে অতি উচ্চতায় আক্রমনকারী শত্রু পক্ষের নিউক্লিয়ার বা থার্মো-নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডবাহী ব্যালেস্টিক মিসাইলকে কার্যকর ভাবে প্রতিহত বা ইন্টারসেপ্ট করার জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

টিএইচএডি বা টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স আসলে লং রেঞ্জ ভূমি ভিত্তিক ভ্রাম্যমান মিসাইল লাউঞ্চিং সিস্টেম যা মুলত ব্যালেস্টিক মিসাইলকে অতি উচ্চতায় এমনকি বায়ু মন্ডলের বাহিরে সরাসরি আঘাতের মাধ্যমে ধ্বংস বা প্রতিহত করতে সক্ষম। এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সাধারনত প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্রে নিদিষ্ট ক্ষমতার বিস্ফোরকবাহী ওয়ারহেড থাকলেও থাড কিন্তু এর সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। অর্থ্যাত্ত্র থাড এ কোন ওয়ারহেড থাকে না বা নেই। থাড সাধারণত আগত ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রকে লেট মিড কোর্স বা ফাইনাল স্টেজে ক্ষিপ্ত গতিতে সরাসরি আঘাতের মাধ্যমে অতি উচতায় এমনকি বায়ু মন্ডলের বাহিরে ধ্বংস বা প্রতিহত করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। আর সেই অর্থে থাড মিসাইলকে একটি বিশাল আকারের বুলেট বলা চলে।

আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৮ সাল থেকে টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সবা থাড এর উতপাদন এবং কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় স্থানে মোতায়েন করতে থাকে। থাড মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্রের ওজন ৯০০ কেজি এবং এর দৈর্ঘ্য ৬.১৭ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ব্যাস ৩৪ সেন্টিমিটার। এছাড়া থাড এর ক্ষেপনাস্ত্র ৮.২৪ ম্যাক গতিতে অতি উচ্চতায় ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে কোন ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র ইন্টারসেপ্ট বা প্রতিহত করতে সক্ষম। আবার থাড মিসাইল ইনফ্রায়েড সীকার হেড সিস্টেমের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ব্যালেস্টিক মিসাইল সনাক্ত করে তা ধ্বংস করতে পারে বলে মনে করা হয়।

আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও চীনের ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের আক্রমন প্রতিহত করতে এবং ছাতার মতো নিজস্ব প্রতিরক্ষা বলয় গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে উচ্চ প্রযুক্তির টিএইচএডি বা টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স সিস্টেম বা অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব একাধিক ঘাঁটিতে থাড মোতায়েন করার পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়ে কৌশলগত ভাবে জোটভুক্ত ও বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রে থাড সিস্টেম অতি উচ্চমূল্যে রপ্তানি ও মোতায়েন করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগন ২০১১ সালের মধ্যপ্রাচ্যে আরব আমিরাতের কাছে এবং ২০১৩ সালে ওমানের কাছে থাড প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা বিক্রয়ের বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এছাড়া চীন ও উত্তর কোরিয়ার প্রবল আপত্তি স্বত্তেও উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলার হুমকি মোকাবেলার অযুহাতে দক্ষিন কোরিয়ায় থাড সিস্টেম মোতায়েন করতে যাচ্ছে। আবার এদিকে জাপানের আবে সরকার চীন ও উত্তর কোরিয়ার সাথে বিবাদ ও সামরিক হুমকি ও চাপ মোকাবেলায় থাড অথবা এজিস এশোর (Aegis Ashore) ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

Sherazur Rahman, সহকারি শিক্ষক ও লেখক, জয়কুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

ইএল ক্যাপ্টেন' এক অবিশ্বাস্য দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার!

এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

Brain-Computer Interface (BCI) technology: