এক লিজেন্ডারী যুদ্ধবিমান এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেটঃ

 


আশি ও নব্বইয়ের দশকে আমেরিকা এফ-১৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ক্যারিয়ার বেসড একটি নতুন সিরিজের যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আনে৷ যা ছিল কিনা এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেট। ততকালীন সময়ে এটি সারা বিশ্বে ব্যাপক সারা ফেলে দেয়। মূলত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমানের ব্যবহারকারী দেশ ছিল আমেরিকা ও ইরান। অথচ গত ২০০৬ সালে তার নৌবাহিনীতে অপারেশনাল থাকা প্রায় চার শতাধিকের অধিক এই সিরিজের যুদ্ধবিমান সার্ভিস লাইফ টাইম শেষ হওয়ার আগেই এক সাথে অবসরে পাঠিয়ে দেয় ইউএস নেভাল ফোর্স।





আমেরিকার নৌবাহিনী ২০০৬ সাল থেকেই সার্ভিসে আনে নতুন এফ-১৮ হর্নেট ক্যারিয়ার বেসড যুদ্ধবিমান। তবে বর্তমানে খুব সম্ভবত ইরানের বিমান বাহিনীতে ১৮টি থেকে ২৪টি এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমান রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে সচল রাখা হয়েছে। যদিও ইরানের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতায় এই যুদ্ধবিমানের একটি বড় অংশ মর্ডানাইজেশন এবং রিপিয়ার মেইন্টেনেন্সের অভাবে অনেক আগেই গ্রাউন্ডেড হয়ে পড়ে রয়েছে।




আমেরিকার এভিয়েশন জায়ান্ট নরথ্রপ গ্রুম্যান এ্যারোস্পেস কর্পোরেশনের তৈরি এফ-১৪ টমক্যাট ১৯৭৪ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে এবং মোট ৭১২টি এই জাতীয় এডভান্স জেট ফাইটার তৈরি করেছিল। আসলে গত ১৯৭৯ সালের আগ পর্যন্ত মার্কিনপন্থী ইরানের রেজাশাহ পাহেলভী সরকারের আমলে মোট ৮০টি এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমান ইরানের কাছে বিক্রি করেছিল আমেরিকা। যার মধ্যে ৭৯টি সরবরাহ করা হয়।




তবে ১৯৭৯ সালে ইরানের রেজাশাহ পাহেলভী সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় চলে আসে মার্কিন বিরোধী বিপ্লবী ইসলামীক খোমেনী সরকার। এ পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের সকল ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইরানের সাথে অস্ত্র চুক্তি ও দীর্ঘ মেয়াদী সামরিক সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে। তার সাথে মার্কিন প্রশাসন ইরানকে দেয়া এফ-১৪ টমক্যাট এর সকল ধরণের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।


যদিও রেজাশাহ পাহেলভী সরকারের আমলেই এফ-১৪ টমক্যাটের মূল অস্ত্র হিসেবে আনুমানিক ২৭২টি এআইএম-৫৪ ফনিক্স মিসাইল, ৭০০টি এআইএম-৯ সাইডউইণ্ডার এবং এআইএম-৭ স্প্যারো এয়ার টু এয়ার মিসাইল ইরানের হাতে চলে যায়। আর এই মিসাইলগুলো ইরাক-ইরান যুদ্ধ চলাকালে ইরাকের বিমান বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধণ করে।





এফ-১৪ টমক্যাট জেট ফাইটারের সবচেয়ে সফল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলা ভয়াবহ ইরাক-ইরান যুদ্ধে। এই দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধে ইরানের বিমান বাহিনীর এফ-১৪ টমক্যাট ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিমান বাহিনীর ১৬০টি জেট ফাইটার, বোম্বার, হেলিকপ্টার ধ্বংস করে আকাশ যুদ্ধের এক বিরল রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।



আর ইরানের বিমান বাহিনীর অত্যন্ত দক্ষ পাইলট জলিল জানদি এফ-১৪ টমক্যাট ব্যবহার করে ইরাকের বিমান বাহিনীর মোট ১১টি যুদ্ধবিমান একাই ধ্বংস করেন। যদিও একই সময় ইরানের বিমান বাহিনীর ১৬টি এফ-১৪ টমক্যাট আকাশ যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া ইরাক ইরান যুদ্ধ ছাড়াও ১৯৯০-৯১ সালে পার্সিয়ান ও সার্বিয়া যুদ্ধসহ একাধিক যুদ্ধে এর মোট এয়ার টু এয়ার কনফার্ম কিলিং রেকর্ড রয়েছে ১৮৯টি।


এফ-১৪ টমক্যাট ছিল মূলত একটি ইন্টারসেপ্টর কমব্যাট এয়ারক্রাফট। যাকে সার্ভিসে আনা হয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বোম্বার ও এদের এসকর্টে আসা ফাইটার জেটগুলোর হাত থেকে ইউএস ক্যারিয়ার ফ্লিটকে রক্ষা করা। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার ন্যাভাল এভিয়েশন দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই ইউএস নেভিও টমক্যাটের বদলে বাজেট ফ্রেন্ডলি একটা জেট ফাইটারের খোঁজ করতে থাকে। আর টমক্যাটের গ্রাউন্ড অ্যাটাক দক্ষতা ছিলো কম, তাই এর সাথে এফ-৪ ফ্যান্টমের সমন্বয় করে ক্যারিয়ারের এয়ারক্রাফট উইং বানাতে হতো। যা ছিল বেশ ঝামেলা পূর্ণ। তাই এফ-১৮ হর্নেট সার্ভিসে আসলে খুব দ্রুত এটিকে অবসরে পাঠিয়ে দেয় আমেরিকার নৌবহর।





সিরাজুর রহমান,(Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।






Comments

Popular posts from this blog

ভারত ও চীনের সীমান্ত উত্তেজনা...

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দ্রুত বাস্তবায়ন আর কত দূরে ?